আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে নিজেদের আর্থিক ও তহবিল পরিচালনা নীতিমালা প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি জানিয়েছে, দলীয় খরচ নির্বাহে প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর মতো অজানা উৎসের অর্থ নয়, বরং জনসম্পৃক্ত, স্বচ্ছ ও বৈধ উৎসকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।
দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মাসিক সদস্য ফি, ‘১০০ টাকা ক্যাম্পেইন’ ও ‘ছোট দান, বড় স্বপ্ন’ ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি এনসিপি টি-শার্ট, মগ, বই, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও অনলাইন কোর্স বিক্রি করে তহবিল গঠন করবে। দলটির ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইন ডোনেশন, মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করা যাবে। অনুদানকারীরা সরাসরি রসিদ গ্রহণ করেও অর্থ দিতে পারবেন।
গতকাল বুধবার (৪ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে দলীয় অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ও কোষাধ্যক্ষ এস এম সাইফ মোস্তাফিজ।
তিনি বলেন, আমরা আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাই। কালোটাকা, অজানা উৎস, বিদেশি সরকার কিংবা অপরাধসংশ্লিষ্ট অর্থ গ্রহণ করা একেবারেই নিষিদ্ধ।
তিনি আরও জানান, প্রতিটি অনুদানে স্বয়ংক্রিয় রসিদ, অনলাইন এন্ট্রি এবং ইউনিক আইডি সংযুক্ত থাকবে। ৫ হাজার টাকার বেশি দানের ক্ষেত্রে দাতার পরিচয় গোপন রাখা হলেও দলীয়ভাবে তা সংরক্ষণ করা হবে এবং প্রয়োজনে প্রকাশ করা যাবে। দলের ওয়েবসাইটের ড্যাশবোর্ডে লাইভ আপডেটের মাধ্যমে দেশের কোন জেলা থেকে কত অর্থ এসেছে—সেটিও দেখা যাবে।
সদস্য ফরম বিক্রি থেকে ২ কোটি টাকা
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এনসিপি বর্তমানে ১০০ টাকা মূল্যের সদস্য ফরম বিক্রি করছে। ইতিমধ্যে সারা দেশে ৭০ হাজার ফরম ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ঈদুল আজহা সামনে রেখে আরও ৫০ হাজার ফরম বিতরণের প্রস্তুতি চলছে। এই ফরম বিক্রি থেকেই প্রায় ২ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ হবে বলে আশা করছেন দলীয় নেতারা।
কোনো ব্যক্তিকে নগদ অর্থ না দেওয়ার অনুরোধ
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম স্পষ্টভাবে জানান, এনসিপিকে সহায়তা করতে আগ্রহী কেউ যেন ব্যক্তিগতভাবে কাউকে নগদ অর্থ না দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফাইন্যান্স টিম ও নির্ধারিত অ্যাকাউন্ট নম্বরের বাইরে কেউ দল বা ছাত্র সংগঠনের নাম ব্যবহার করে অর্থ চেয়ে থাকলে, তা অবিলম্বে আমাদের দপ্তর বা শৃঙ্খলা কমিটিকে জানাতে হবে। অতীতে অনেক অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে, এমনকি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকারও হয়েছি।’
তিন ধাপে নিরীক্ষা, প্রতি বছর অডিট প্রকাশ
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, দলের আর্থিক হিসাব তিন মাস, ছয় মাস ও বার্ষিক ভিত্তিতে নিরীক্ষার আওতায় আনা হবে। তিনি জানান, সদস্যদের এককালীন ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা চাঁদা, মাসিক সদস্য ফি, সদস্য ফরম বিক্রি এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুদানের মাধ্যমেই দলের বর্তমান ব্যয়ভার চলছে।
আখতার হোসেন আরও বলেন, ‘নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করার সময় পূর্ণাঙ্গ অডিট প্রকাশ করা হবে। প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে অনুমোদিত অডিট ফার্মের মাধ্যমে আয়-ব্যয়ের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে এবং ওয়েবসাইটেও তা থাকবে।’
করপোরেট অনুদানে শর্ত
দলটি জানিয়েছে, করপোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান গ্রহণ করা হলেও তা অবশ্যই নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে গ্রহণযোগ্য হবে। কোনো অনৈতিক উৎস থেকে অর্থ নেওয়া হবে না।
আর্থিক স্বচ্ছতা রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হওয়া দরকার
নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশের রাজনীতিতে পেশিশক্তি, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির মূল ভিত্তি হলো অর্থের অপব্যবহার। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অর্থনৈতিক উৎস ও ব্যয়ের বিবরণ প্রকাশ করে না। এ সংস্কৃতি বদলাতে হবে। নির্বাচন কমিশনকেও এ ক্ষেত্রে আরও কঠোর হওয়া দরকার।
আপনার মতামত লিখুন :