ঢাকা রবিবার, ০১ জুন, ২০২৫

বিসিবি সভাপতি হওয়ার আগে কি করতেন আমিনুল?

ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ১২:০৯ পিএম
আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আমিনুল ইসলাম আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ঘোষণা দিলেন, ‘আমার এখন যে স্কিল সেট আছে, এটা একটা প্যাকেজ। আমি ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশে যেমন কাজ করেছি, তেমনি তাজিকিস্তান বা উজবেকিস্তানেও।’

ক্রিকেট বিশ্বে অপরিচিত এই দেশগুলোর নাম শুনে অনেকেই বিস্মিত হলেও, আমিনুল ইসলামের ক্রিকেট যাত্রার এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি আইসিসির ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে বিভিন্ন দেশে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করেছেন।

আমিনুল ইসলাম এমন সব দেশে ক্রিকেটকে নিয়ে গেছেন, যাদের সঙ্গে ব্যাট-বলের সংযোগ খুব একটা ছিল না। চীন, হংকং, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোতে এসিসি ও আইসিসির সঙ্গে মিলে হাই পারফরম্যান্স এবং অন্যান্য প্রোগ্রামের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। 

এই কাজগুলো এখনো তিনি করেন। যদিও আইসিসির সঙ্গে তার আগের চুক্তির মেয়াদ ছিল জুন পর্যন্ত, আমিনুল জানিয়েছেন তিনি আইসিসির চাকরি ছেড়ে এসেছেন।

আগামী অক্টোবরে বিসিবি নির্বাচন পর্যন্ত তার সভাপতির মেয়াদ, তবে এরপর আবার আইসিসিতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা তিনি উড়িয়ে দেননি।

খেলোয়াড় থেকে কোচ, তারপর সংগঠক

২০০৪ সালে খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করার পর আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশেই ছিলেন। কোচিং কোর্সের লেভেল-১, লেভেল-২, লেভেল-৩ সম্পূর্ণ করে তিনি এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।

এমনকি কোচ হিসেবে প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীকে চ্যাম্পিয়নও করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তার সংযোগ খেলোয়াড় থাকার সময় থেকেই ছিল। নব্বইয়ের দশকে তার স্ত্রী পড়তে যান দেশটিতে। এরপর থেকে যাতায়াত বেড়ে যায় এবং ২০০৩ সালে পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতেই থিতু হন। 

সেখানেও শুরুতে কোচিং করিয়েছেন, পরে আইসিসিতে যুক্ত হন। বায়োমেকানিক্স, ভিশন, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, খেলোয়াড়দের মনস্তত্ত্ব (সাইকোলজি)-এর মতো বিষয়গুলোতে তিনি দক্ষতা অর্জন করেন।

এসব কাজে লাগিয়েই ক্রিকেটে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোতে কাজ করেছেন তিনি। সংগঠকের ভূমিকায় অবশ্য এবারই প্রথম দেখা যাচ্ছে আমিনুলকে।

আমিনুলের বর্ণিল খেলোয়াড়ি জীবন

আমিনুল ইসলামের খেলোয়াড়ি জীবনও ছিল বর্ণিল। প্রায় ১৪ বছর তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেন।

অধিনায়ক হিসেবে ১৬ ম্যাচে মাঠে নেমে দুটিতে জয় পেয়েছেন, যার মধ্যে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাওয়া সেই ঐতিহাসিক জয় অন্যতম। টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ানও আমিনুল। 

২০০০ সালে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টেই ভারতের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েছিলেন। ১৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে ওই সেঞ্চুরি ছাড়াও তার দুটি ফিফটি আছে, এই সংস্করণে তিনি ৫৩০ রান করেছেন।

৩৯ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে অবশ্য কখনো সেঞ্চুরির দেখা পাননি। তিন ফিফটিতে এই সংস্করণে ৭৯৪ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪০ ম্যাচে চার সেঞ্চুরিতে করেছেন ১৯৪০ রান।

কঠিন এক সময়ে বিসিবির দায়িত্ব নেওয়ার আগে আমিনুল ইসলামের জীবনবৃত্তান্ত বেশ সমৃদ্ধ বলা যায়। কিন্তু তার সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক। যার উত্তরসূরি হিসেবে তিনি চেয়ারে বসছেন, সেই ফারুক আহমেদ ছিলেন সাবেক কোনো ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম বিসিবি সভাপতি। 

সংগঠকের ভূমিকায় ৯ মাসও টিকতে পারেননি ফারুক। এখন তার জায়গায় দায়িত্ব নিচ্ছেন আরেক সাবেক অধিনায়ক আমিনুল। নতুন এই দায়িত্বে তার দূরদর্শিতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতা বিসিবিকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।