তারকা যুগের অবসান ঘটিয়ে প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) এখন নতুন পথে হাঁটছে। তারকার ওপর নির্ভরতা ছেড়ে গঠনমূলক দলগত ফুটবলের দিকে ঝুঁকছে ফরাসি ক্লাবটি, আর এই রূপান্তরের মূল কারিগর স্প্যানিশ কোচ লুইস এনরিকে।
অভিজ্ঞ এই কোচের নেতৃত্বে তারুণ্যদীপ্ত পিএসজি আজ (৩১ মে) রাতে ইউরোপ সেরার মুকুট জয়ের লক্ষ্যে সিরি আ’র ক্লাব ইন্টার মিলানের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে মাঠে নামবে।
পিএসজিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই এনরিকে ক্লাবের অভ্যন্তরে ‘ফুটবলের স্থপতি’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, একটি তরুণ, অনুপ্রাণিত এবং সংঘবদ্ধ দলই পিএসজির ভবিষ্যৎ। তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে ওঠা এই নতুন দল এখন চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের দ্বারপ্রান্তে।
তারকা প্রীতির অবসান, এনরিকে যুগের শুরু
চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে পৌঁছানো পিএসজির বর্তমান যাত্রা শুরু হয়েছিল ক্লাব প্রেসিডেন্ট নাসের আল-খেলাইফির তারকা প্রীতি থেকেই। মেসি-নেইমার-এমবাপ্পে-জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ থেকে উরুগুয়ের তারকা ফরোয়ার্ড এডিসন কাভানি বিশ্ব ফুটবলের অনেক নক্ষত্রই পিএসজিতে খেলেছেন।
রক্ষণভাগ সামলেছেন থিয়াগো সিলভা-মার্কুইনহোসের মতো বিশ্বমানের খেলোয়াড়রা। তারপরও তারকা দিয়ে সাফল্য পাওয়ার আশায় ফরাসি জায়ান্টরা বারবার হোঁচট খেয়েছে।
ইউরোপে বারবার ব্যর্থতার পর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে এনরিকের নিয়োগ ক্লাবের দিক বদলের স্পষ্ট বার্তা ছিল। এন্টোনিও কন্তে বা হোসে মরিনহোর মতো তারকা কোচদের বদলে ক্লাব বেছে নেয় ধৈর্য ও ভবিষ্যতের নির্মাতা এনরিকেকে।
সাবেক ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রাই বলেন, ‘কৌশলগত আনুগত্য এবং শারীরিক তীব্রতা, এই তরুণদের মধ্যে সবই আছে এবং এনরিকের কোচিংয়ের জাদুতে সেটা ফুটে উঠছে। এটা প্রমাণ করে যে, খেলোয়াড়রা তার ওপর আস্থা রাখে।’
মেসি-নেইমার-এমবাপ্পে যুগে যেখানে কোচের সিদ্ধান্তে তারকারা প্রভাব ফেলতেন, সেখানে এখন এনরিকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ফরাসি ক্রীড়া সাংবাদিক পিয়েরে-এতিয়েন মিননজিও বলেন, ‘আগে খেলোয়াড়রা কোচকে পাশ কাটিয়ে যেত। এখন আর সেটা হয় না।’
এনরিকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘আমি বস, এবং সেটাই থাকব। তার কঠোর নিয়মানুবর্তিতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ ফুটবলের বাইরেও বিস্তৃত। আয়রনম্যান চ্যালেঞ্জ থেকে সাহারা মরুভূমির ‘ম্যারাথন দ্য সাবল’ সব জয় করেছেন তিনি।’
তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে ২০১৯ সালে মেয়ে জানাকে হারানোর ব্যথা। এনরিকে বলেন, ‘ওর শরীর পৃথিবীতে নেই, কিন্তু সে মরে যায়নি। প্রতিদিন ওকে নিয়ে কথা বলি, হাসি। জানা এখনো আমাদের সঙ্গেই আছে।’
তরুণদের ওপর ভরসা, পিএসজির নতুন মুখ
রিয়াল মাদ্রিদে ফ্রি ট্রান্সফারে এমবাপ্পের বিদায়ে তৈরি হয় ‘নতুন শূন্যতা’, আর সেই জায়গা দারুণভাবে পূরণ করছে ডিজায়ার দুয়ে, ব্র্যাডলি বারকোলা ও ওসমান ডেম্বেলের মতো তরুণরা।
প্রিমিয়ার লিগের পরাক্রমশালী ক্লাব, ম্যানচেস্টার সিটি, লিভারপুল, অ্যাস্টন ভিলা, আর্সেনালকে তারা রীতিমতো নাকানিচুবানি খাইয়েছে। জানুয়ারিতে ৭০ মিলিয়ন ইউরোয় যোগ দেওয়া খাভিচা কাভারাস্কেইয়া যেন পাজলের শেষ টুকরো। দলের প্রয়োজনে আক্রমণ থেকে রক্ষণ সব দিক সামলান এই ‘জর্জিয়ান মেসি’।
চ্যাম্পিয়নস লিগে সবচেয়ে কমবয়সি দল (গড় বয়স ২৪ বছর ২৬২ দিন) এবার পিএসজি। হাই-প্রেসিং এবং শট-এন্ডিং হাই টার্নওভারে (৩৭) শীর্ষে তারা। উল্টো দিকে ইন্টার মিলানের গড় বয়স ৩০ বছরের বেশি—অভিজ্ঞতা বনাম তারুণ্য হবে এবার ফাইনালের মূল লড়াই।