ফুটবল বিশ্বে ‘জাদুকর’ নামে খ্যাত লিওনেল মেসির বর্তমান বাজার মূল্য ১৮ মিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশি টাকায় ২৫৩ কোটিরও বেশি)।
বিশ্ববিখ্যাত ফুটবল পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কেট-এর সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে।
৩৭ বছর বয়সেও ফুটবলের মাঠে আলো ছড়াচ্ছেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মায়ামি ক্লাব-এর হয়ে খেলছেন তিনি।
বয়সের ভার ও ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবল থেকে বিদায় নেওয়ার কারণে আগের তুলনায় বাজারমূল্যে বড় পতন ঘটলেও এখনও অনেক তরুণ ফুটবলারের চেয়েও তিনি বেশি মূল্যবান।
খেলোয়াড়দের বাজার মূল্য কি?
একজন খেলোয়াড়ের বাজার মূল্য হলো তার বর্তমান বা সম্ভাব্য স্থানান্তরের (ট্রান্সফার) জন্য একটি ক্লাব অন্য একটি ক্লাবকে যে আনুমানিক অর্থ প্রদান করতে ইচ্ছুক, তার একটি পরিমাপ।
এটি কেবল খেলোয়াড়ের চুক্তির মূল্য নয়, বরং খেলোয়াড়কে অন্য ক্লাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হতে পারে, তার একটি অনুমান।
এই মূল্য বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে এবং এটি স্থির থাকে না, বরং নিয়মিত পরিবর্তিত হয়।
খেলোয়াড়ের বাজার মূল্য নির্ধারণে যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে
মাঠের পারফরম্যান্স: খেলোয়াড়ের গোল, অ্যাসিস্ট, ট্যাকেল, সেভ, বা অন্য যেকোনো পজিশনের জন্য তার পারফরম্যান্স সরাসরি তার বাজার মূল্যকে প্রভাবিত করে। নিয়মিত ভালো খেলা এবং দলের সাফল্যে অবদান রাখা খেলোয়াড়দের মূল্য বেশি হয়।
ধারাবাহিকতা: একজন খেলোয়াড় যদি নিয়মিতভাবে ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারে, তবে তার মূল্য বেশি হয়। অনিয়মিত পারফরম্যান্স বাজার মূল্য কমিয়ে দিতে পারে।
বয়স: বাজার মূল্য নির্ধারণে বয়স গুরুত্বপূর্ণ । সাধারণত, ২০ থেকে ২৮ বছর বয়সী খেলোয়াড়দের বাজার মূল্য সবচেয়ে বেশি থাকে।
কারণ এই বয়সে তারা তাদের খেলার সেরা ফর্মে থাকে এবং তাদের ক্যারিয়ারের এখনও অনেক বাকি থাকে।
চুক্তির মেয়াদ: খেলোয়াড়ের বর্তমান ক্লাবের সাথে তার চুক্তির মেয়াদ একটি বড় ভূমিকা পালন করে। যদি একজন খেলোয়াড়ের চুক্তির মেয়াদ কম থাকে (যেমন, ৬ মাস বা ১ বছর), তবে তার বাজার মূল্য তুলনামূলকভাবে কম হয়।
কারণ, ক্লাব তাকে বিনামূল্যে হারানোর ঝুঁকি এড়াতে কম মূল্যে বিক্রি করতে আগ্রহী হতে পারে।
অন্যদিকে, যদি একজন খেলোয়াড়ের দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি থাকে (যেমন, ৩-৫ বছর), তবে তার ক্লাবকে একটি বড় অঙ্কের অর্থ প্রদান করতে হয় তাকে কেনার জন্য। কারণ ক্লাব তাকে সহজে ছাড়তে চায় না।
পজিশন: মাঠের বিভিন্ন পজিশনের খেলোয়াড়দের বাজার মূল্য ভিন্ন হয়। সাধারণত, আক্রমণভাগের খেলোয়াড় (স্ট্রাইকার, উইঙ্গার) এবং মাঝমাঠের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের মূল্য ডিফেন্ডার বা গোলরক্ষকদের চেয়ে বেশি হয়।
এর কারণ হলো, আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা সরাসরি গোল করা বা করানোর সাথে জড়িত থাকে, যা খেলার ফলাফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।
ইনজুরি রেকর্ড: একজন খেলোয়াড়ের ইনজুরি রেকর্ড তার বাজার মূল্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। যদি কোনো খেলোয়াড় ঘন ঘন ইনজুরিতে ভোগেন বা গুরুতর ইনজুরির ইতিহাস থাকে, তবে ক্লাবগুলো তাকে কেনার ক্ষেত্রে দ্বিধাবোধ করে এবং তার মূল্য কমে যায়।
লিগের মান এবং ক্লাবের মর্যাদা: যে লিগে খেলোয়াড় খেলে, তার মান বাজার মূল্য নির্ধারণে প্রভাব ফেলে। যেমন, ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ, স্প্যানিশ লা লিগা, জার্মান বুন্দেসলিগা, ইতালিয়ান সিরি এ, বা ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের মতো শীর্ষ লিগগুলোতে খেলা খেলোয়াড়দের মূল্য সাধারণত বেশি হয়। কারণ এই লিগগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি এবং খেলোয়াড়দের মান উন্নত।
খেলোয়াড় কোন ক্লাবে খেলে, তার উপরও মূল্য নির্ভর করে। বড় ও সফল ক্লাবের খেলোয়াড়দের মূল্য স্বভাবতই বেশি হয়।
জাতীয় দলের হয়ে পারফরম্যান্স এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি: জাতীয় দলের হয়ে ভালো পারফরম্যান্স এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ (যেমন বিশ্বকাপ, ইউরো) খেলোয়াড়ের বাজার মূল্য অনেক বাড়িয়ে দেয়।
আন্তর্জাতিক তারকা খেলোয়াড়দের বিশ্বজুড়ে চাহিদা থাকে।
ব্যক্তিগত ইচ্ছা এবং পরিস্থিতি: অনেক সময় খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত ইচ্ছাও তার বাজার মূল্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
যদি একজন খেলোয়াড় নির্দিষ্ট কোনো ক্লাবে যেতে মরিয়া হন বা তার ক্লাব ছাড়তে চান, তবে তার ক্লাব তাকে কম মূল্যেও ছেড়ে দিতে পারে।
এদিকে একসময় মেসির বাজারমূল্য ছিল ১৮০ মিলিয়ন ইউরোরও বেশি। তবে ফুটবল জীবনের পড়ন্ত বেলায়ও যে তিনি শীর্ষ তারকাদের কাতারে রয়েছেন, তা স্পষ্ট এই মূল্যায়নেই।
তবে বাজারমূল্য নির্ধারণে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কিছু ভিন্নতা দেখা গেছে।
মেসি চলতি মৌসুমে ইন্টার মায়ামির হয়ে গোল ও অ্যাসিস্টের দিক থেকে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স করছেন। তার নেতৃত্বে দলটি বর্তমানে ফিফার ক্লাব বিশ্বকাপ খেলছে।
