গত চার এল ক্লাসিকোর হতাশা ভুলে বার্সেলোনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষস্থান মজবুত করল শাবি আলোন্সোর দল।
রোববার (২৬ অক্টোবর) সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে গোল, পেনাল্টি মিস, রেফারির সিদ্ধান্ত বদল, শেষ দিকে লাল কার্ড, টাচলাইনে হাতাহাতি- রোমাঞ্চ আর উত্তেজনার কোন কমতি ছিল না ম্যাচটিতে।
গোল করে ও করিয়ে রিয়ালের জয়ের নায়ক জুড বেলিংহ্যাম। কাঁধে অস্ত্রোপচারের কারণে মৌসুমের শুরুতে বেশ কিছু ম্যাচে বাইরে ছিলেন এই ইংলিশ মিডফিল্ডার। আগের ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইউভেন্তুসের জালে বল পাঠিয়ে মৌসুমে প্রথম গোলের দেখা পাওয়ার পাশাপাশি চেনা ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছিলেন তিনি। এবার মেলে ধরলেন নিজের সেরাটা।
কিলিয়ান এমবাপের গোলে স্বাগতিকরা এগিয়ে যাওয়ার পর সমতা ফেরান ফের্মিন লোপেস। প্রথমার্ধেই দলকে আবার এগিয়ে নেন বেলিংহ্যাম। দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন এমবাপে।
গত মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে চার ক্লাসিকোর সবকটিতে বার্সেলোনার কাছে হেরেছিল রিয়াল। আলোন্সোর কোচিংয়ে প্রথম ক্লাসিকোয় এবার জয়ের স্বাদ পেল তারা।
লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধারের অভিযানে ১০ ম্যাচে ৯ জয়ে রিয়ালের পয়েন্ট হলো ২৭। সমান ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে গতবারের চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা।
চোট-অসুস্থতা মিলিয়ে রাফিনিয়া, রবের্ত লেভানদোভস্কিসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে রিয়ালের বিপক্ষে পায়নি বার্সেলোনা। নিষেধাজ্ঞার কারণে ডাগআউটে থাকতে পারেননি কোচ হান্সি ফ্লিকও।
ক্লাসিকোর কয়েক দিন আগে রিয়ালকে নিয়ে লামিনে ইয়ামালের আপত্তিকর এক মন্তব্য ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা হয় প্রবল। ম্যাচ শুরুর আগে স্টেডিয়ামের স্পিকারে বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডের নাম উচ্চারিত হতেই দুয়ো দিতে থাকেন রিয়ালের সমর্থকরা। পুরোটা সময় খেলেও চেনা রূপে দেখা যায়নি তরুণ এই স্প্যানিশ তারকাকে।
মাত্র ৩২ শতাংশের মতো পজিশন রেখে গোলের জন্য ২৩টি শট নিয়ে ১০টি লক্ষ্যে রাখতে পারে রিয়াল। বার্সেলোনার ১৫ শটের ৬টি লক্ষ্যে ছিল।
চতুর্থ মিনিটে রেফারির একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ছড়ায় উত্তেজনা। বার্সেলোনার বক্সে ভিনিসিউস জুনিয়র শট নেওয়ার সময় পেছনে থেকে পা বাড়িয়ে দেন ইয়ামাল, তার পায়ে শট মেরে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড পড়ে গেলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তবে ভিএআরে পর্যালোচনার পর মনিটরে দেখে আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন তিনি।
দ্বাদশ মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত ভলিতে বার্সেলোনার জালে বল পাঠিয়ে উল্লাসে মাতেন কিলিয়ান এমবাপে। তবে একটু পরই অফসাইডের সংকেত দেন রেফারি।
গোলের জন্য অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়নি রিয়ালকে। বেলিংহ্যাম ও এমবাপের নৈপুণ্যে ২২তম মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। মাঝমাঠের কাছাকাছি থেকে চমৎকার এক পাস দেন বেলিংহ্যাম, অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে বল ধরে বক্সে ঢুকে নিচু শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন এমবাপে।
ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে টানা ১১ ম্যাচে জালের দেখা পাওয়ার পর ইউভেন্তুস ম্যাচে গোলহীন ছিলেন এমনবাপে। পরের ম্যাচেই আবার গোল করলেন তিনি। ১১ গোল নিয়ে চলতি আসরের সর্বোচ্চ স্কোরার বিশ্বকাপ জয়ী এই তারকা।
একটু পরপরই বার্সেলোনার রক্ষণে হানা দিতে থাকে রিয়াল। ৩০তম মিনিটে এমবাপে ও ডিন হাউসেনের প্রচেষ্টা রুখে দেন গোলরক্ষক ভয়চেখ স্ট্যান্সনি।
শুরুর অনেকটা সময় ধরে নিষ্প্রভ বার্সেলোনা প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পায় ৩৪তম মিনিটে। কিন্তু বক্সের ভেতর থেকে খুব জোরাল শট নিতে পারেননি ফেররান তরেস, অনায়াসে ঠেকান থিবো কোর্তোয়া। লক্ষ্যে বার্সেলোনার প্রথম শট এটিই।
৩৮তম মিনিটে সমতা ফেরায় বার্সেলোনা। গোলটিতে দায় ছিল রিয়ালের আর্দা গিলেরের। এই মিডফিল্ডার বলের নিয়ন্ত্রণ হারালে পেয়ে যান মার্কাস র্যাশফোর্ড। এই ইংলিশ ফরোয়ার্ড আলেহান্দ্রো বাল্দেকে পাস দিয়ে, ফিরতি পাস পেয়ে বল দেন ছয় গজ বক্সের বাইরে, আর জোরাল শটে জালে পাঠান ফের্মিন লোপেস।
চার মিনিট পরই অবশ্য লিড পুনরুদ্ধার করে রিয়াল। বাঁ দিকের বাইলাইনের কাছ থেকে ভিনিসিউসের উঁচু করে বাড়ানো বলে এদের মিলিতাওয়ের হেডের পর লাফিয়ে হেড করার চেষ্টায় পারেননি হাউসেন, কাছ থেকে অনায়াসে ফাঁকা জালে বল পাঠান অরক্ষিত বেলিংহ্যাম।
একটু পর এমবাপে কাছ থেকে আবার জালে বল পাঠালেও অফসাইডের কারণে গোল মেলেনি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন তিনি। বক্সে এরিক গার্সিয়ার হাতে বল লাগলে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি। এমবাপের শট ঝাঁপিয়ে এক হাতে ঠেকান স্ট্যান্সনি।
৬৮তম মিনিটে বার্সেলোনার জালে আরেকবার বল পাঠান বেলিংহ্যাম এবং আরেকবার অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি।
মাঝে অনেকটা সময় কোনো পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কেউ। ভিনিসিউসের জায়গায় রদ্রিগোকে নামানোর পর শেষ দিকে বেলিংহ্যাম ও এমবাপেকেও তুলে নেন আলোন্সো।
৯ মিনিট যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে রদ্রিগোর শট ফিরিয়ে দেন স্ট্যান্সনি। অষ্টম মিনিটে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারের ফ্রি-কিকও ব্যর্থ করে দেন পোলিশ গোলরক্ষক।
শেষ মিনিটে অহেলিয়া চুমামেনিকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন বার্সেলোনা মিডফিল্ডার পেদ্রি। সেই ঘটনায় টাচলাইনে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দুই দলের কেউ কেউ। শেষ বাঁশিও বাজে একটু পরই। এরপর আবার মাঠে হাতাহাতি হয় দুই দলের কয়েকজন খেলোয়াড়ের মধ্যে। সব শেষে উল্লাসে মেতে ওঠে স্বাগতিক শিবির।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন