বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর ও বিশাল ঢেউয়ের জন্য পরিচিত পর্তুগালের মাছধরা গ্রাম নাজারেতে ঢেউয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন নারী সার্ফাররাও। সেই কাতারে রয়েছেন লরা ক্রেন, যিনি গুটিকয়েক নারীর একজন। যারা ১০০ ফুট উচ্চতার ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়ছেন।
নাজারের বিশাল ঢেউ কেবল রোমাঞ্চ নয়, প্রাণঘাতীও বটে। ১৯৯৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ম্যাভেরিকসে ডুবে মারা যান বিখ্যাত সার্ফার মার্ক ফু। ১৯৯৭ সালে হাওয়াইয়ের নর্থ শোরে ঢেউয়ে পড়ে মৃত্যু হয় সার্ফার টড চেসারের।
বড় ঢেউয়ে মাথায় আঘাত, হাড়ভাঙা ও স্পাইনাল ইনজুরি খুবই ভয়ংকর। জীবন বাঁচাতে সার্ফারদের পাশে প্রস্তুত থাকে জেটস্কি চালক দল।
গুয়াতেমালা-আমেরিকান বিগ ওয়েভ সার্ফার পলি রালদা বলেন, বড় ঢেউয়ে পড়লে অনেকটা যেন ট্রেনের ধাক্কা খাওয়ার মতো লাগে। কখনও কিছু হয় না, আবার কখনও শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়—কাঁধ খুলে যায়, পা খুলে যায়।
তিনি আরও বলেন, এই খেলা নির্মম—আমি অনেকবার অজ্ঞান হয়েছি, মৃত্যুর খুব কাছাকাছি গিয়েছি।
নারীরা কি পারবে?
বিগ ওয়েভ সার্ফিংয়ের ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো, হাওয়াই ও পলিনেশিয়ার আদিবাসী সংস্কৃতিতে। কিন্তু আধুনিক প্রতিযোগিতায় নারীরা দীর্ঘদিন উপেক্ষিত থেকেছে।
২০১৬ সালের আগে নারীরা ওয়ার্ল্ড সার্ফ লিগের (WSL) বিগ ওয়েভ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেই পারতেন না। অনেকের যুক্তি ছিল, এটি নারীদের জন্য খুব বিপজ্জনক।
এরপর ২০১৮ সালে প্রথমবার পুরুষ-নারী সমান অর্থ পুরস্কার দেয় ওয়ার্ল্ড সার্ফ লিগ।
তবে বাস্তবে এখনো বেশিরভাগ প্রতিযোগিতায় পুরুষদের জন্য বরাদ্দ স্থান বেশি। এমনকি অনেক সময় প্রবেশের যোগ্যতা নির্ধারণেও বৈষম্য বিদ্যমান।
তোমার স্বপ্নটা মিষ্টি, কিন্তু এটা হবে না
লরা ক্রেন যখন কিশোরী ছিলেন, তখন কেরিয়ার অ্যাডভাইজারকে বলেছিলেন তিনি সার্ফার হতে চান। উত্তরে তাকে বলা হয়, তুমি তো যুক্তরাজ্যের মেয়ে, মেয়েরা এসব করে না।
বছরের পর বছর ইন্ডাস্ট্রির বৈষম্যে বিরক্ত হয়ে তিনি সার্ফিং ছেড়ে দেন। তার ভাষায়, মেয়েদের শরীরকে পণ্য করে দেখানো ছাড়া আর কিছুই ছিল না—বিকিনিতে ছবি তুলে ভিউ বাড়াও, এই ছিল মূল লক্ষ্য।
তবে পরবর্তীতে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফিরে আসেন তিনি। এখন তার লক্ষ্য, সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের দিনগুলোতেই সবার মতোই আমি হাজির থাকি।
তিনি বলেন, বড় দিনে কেউ যদি পানিতে নামে, সে তখনই সম্মান পায়—সে পুরুষ হোক বা নারী।
আপনার মতামত লিখুন :