কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেকার উত্তেজনা এখন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রূপ নিয়েছে। মঙ্গলবার (৬ মে) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিমান, নৌ ও স্থল বাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ত্রিমাত্রিক একটি হামলা চালায় ভারত।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে সংঘটিত বন্দুকধারীদের হামলার জবাবে এ অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে নয়া দিল্লি।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই অভিযানে ভারত অত্যাধুনিক ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
স্ক্যাল্প (স্ট্রম শ্যাডো) ক্ষেপণাস্ত্র
এটি বিমান থেকে নিক্ষেপণযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। এর পাল্লা ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি। ক্ষেপণাস্ত্রটির ওজন প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোগ্রাম। এতে ৪৫০ কিলোগ্রাম ওজনের একটি প্রচলিত বিস্ফোরক ওয়ারহেড রয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রটির সর্বোচ্চ ব্যাস ৪৮ সেন্টিমিটার এবং এর ডানার বিস্তৃতি তিন মিটার।
ক্ষেপণাস্ত্রটি মাইক্রোটার্বো টিআরআই ৬০-৩০ টার্বোজেট ইঞ্জিনে চলে এবং এটি ০ দশমিক ৮ ম্যাক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
তবে চাইলেও যেকোনো যুদ্ধবিমান দিয়ে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা যায় না। এটি সাব গ্রিপেন, ডাসো মিরাজ ২০০০, ডাসো রাফায়েল, পানাভিয়া টর্নেডো, সুখয় এসইউ-২৪ ও ইউরোফাইটার টাইফুন যুদ্ধবিমান থেকে ছুড়তে হয়।
স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরি করেছে ফ্রান্সের এমবিডিএ কোম্পানি। এটি শক্তিশালী বাংকার ও অস্ত্র গুদাম ধ্বংস করতে সক্ষম।
হ্যামার বোমা
ফ্রান্সের সাফরান গ্রুপের তৈরি এই বোমা সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও বহুতল ভবন ধ্বংস করতে ব্যবহার করা হয়। এটি ৫০ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
এই বোমার মূল উদ্দেশ্য হলো শত্রুর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে আঘাত হানা, বিশেষ করে যেখানে প্রচলিত বোমা কাজ করে না।
বোমাটি জিপিএস ও লেজার গাইডেন্স সিস্টেমে পরিচালিত। এর ডিজাইন মডুলার। অর্থাৎ এটিকে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধের পরিস্থিতির জন্য কাস্টমাইজ করা যায়। এটি ২৫০ পাউন্ড থেকে ১ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত ওজনের বিভিন্ন সংস্করণে পাওয়া যায়।
হ্যামার বোমায় শক্তিশালী বিস্ফোরক ওয়ারহেড ব্যবহার করা হয়, যা শত্রুর বাংকার, ট্যাংক, বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করতে সক্ষম। এটি যেকোনো আবহাওয়ায়, এমনকি ঘন কুয়াশা বা বৃষ্টিতেও সফলভাবে ব্যবহার করা যায়। আর এটি রাফায়েল ও মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপ করা যায়।
কামিকাজে ড্রোন
কামিকাজি ড্রোনকে লয়টারিং মিউনিশন বা সুইসাইড ড্রোনও বলা হয়। এগুলো প্রিসিশন মিসাইল ও আনম্যানড এরিয়াল সিস্টেমের মতো হলেও কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। এটি আক্রমণের আগে তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ সময় ধরে আকাশে অবস্থান করতে পারে। এই প্রক্রিয়াকেই ‘লয়টারিং’ বলা হয়।
কামিকাজিতে সাধারণত একটি ওয়ারহেড বা পেলোড থাকে। এগুলো আক্রমণের সময় বিস্ফোরিত হওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
সামরিক অভিযানে কামিকাজি ড্রোনগুলো ফ্রন্ট লাইনের পেছনে অনেক মাইল পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে। এটি আকাশে নিষ্ক্রিয়ভাবে অবস্থান করে। এরপর শনাক্ত করে আক্রমণ করতে পারে।
কামিকাজি ড্রোন ধ্বংস হওয়ার জন্যই তৈরি করা হয়। সাধারণত একটি কামিকাজি ড্রোনের দাম প্রায় ২০ হাজার ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
আপনার মতামত লিখুন :