গেল বছরের শেষ দিকে (২৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালকদের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণে সেদিন তা হয়নি।
নতুন তারিখ ছিল চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি। ওই দিনও ভোটগ্রহণ হয়নি। এরপর আবারও নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়।
বিগত সব নির্বাচন এফডিসিতে হলেও প্রথমবারের মতো রীতি ভেঙে শুক্রবার (৯ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদালত পরিচালক সমিতির নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক বদিউল আলম খোকনের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ২৬ এপ্রিল প্রয়োজনীয় সংস্কার সাপেক্ষে এফডিসিতে নির্বাচনের অনুমতি মিললেও অজানা কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
এরপর সংস্কার ছাড়াই ৯ মে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে ফের বাধার মুখে পরিচালক সমিতি।
পরিচালক সমিতির দ্বি-বার্ষিক এ নির্বাচন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে। একটি পক্ষ বলছে, কেপিআইভুক্ত এলাকা বলে বিএফডিসিতে নির্বাচনের অনুমতি পাওয়া যাবে না। আরেকটি পক্ষ বলছে অন্য কথা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চলচ্চিত্র পরিচালক বলেন, নির্বাচন হতে দিতে চায় না একটি পক্ষ। কারণ, দুই প্যানেলেই স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সমর্থক পরিচালকরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ কারণেই বারবার নির্বাচন স্থগিত হচ্ছে।
জুলাই বিপ্লবের বিরোধীরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে শুরু থেকেই এই নির্বাচনের কঠোর বিরোধিতা করছেন তরুণ পরিচালক মনজুরুল ইসলাম মেঘ।
তিনি দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, জুলাই বিপ্লব চলাকালীন গত ৩ আগস্ট যারা এফডিসিতে মানববন্ধন করে ফ্যাসিস্ট পতনের আন্দোলনকারীদের শাস্তি দাবি করেছিল, স্বৈরাচারের সেইসব দোসররাই তড়িঘড়ি করে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির দুটি প্যানেল গঠন করে ষড়যন্ত্র করছে! কিন্তু সমিতির অধিকাংশ সদস্য এই নির্বাচন বয়কট করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের অবগত করলে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সম্ভব হয়নি। গত ২৬ এপ্রিল এফডিসিতে নির্বাচনের জন্য ভেন্যু চেয়ে আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ সংস্কার সাপেক্ষে নির্বাচন করার অনুমতি দিলে তারা সমিতি সংস্কার না করে জুলাই আন্দোলনের বিরোধীতাকারীদের বাদ না দিয়ে গোপনে জাতীয় প্রেস ক্লাবে নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করে এবং নোটিশ প্রকাশ করে।’
মনজুরুল ইসলাম মেঘ বলেন, আমরা তখন জাতীয় প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষকে সব প্রমাণ প্রেরণ করলে ক্লাব কর্তৃপক্ষ চর্তুথ ধাপে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির ভেন্যু বাতিল করে। এরপর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নির্বাচন করার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু আদালত পরিচালক সমিতির নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
জুলাই আন্দোলনের বিরোধী কাউকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সাধারণ পরিচালক সদস্যরা জুলাই আন্দোলনের বিরোধীতাকারীদের সমিতির নির্বাচন করতে দেব না। সমিতির সব সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই আন্দোলনের পক্ষের সদস্যদের নিয়ে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির কমিটি গঠন করতে চাই।
দুই বছর মেয়াদের কমিটির নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দুটি প্যানেল। একটি প্যানেলের সভাপতি ও মহাসচিব পদে নির্বাচন করছেন শাহীন সুমন ও শাহীন কবির টুটুল।
অপর প্যানেল থেকে সভাপতি ও মহাসচিব পদে আছেন মুশফিকুর রহমান গুলজার ও সাফি উদ্দিন সাফি।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির ২০২৩-২৪ মেয়াদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে চার মাস অতিক্রম করেছে। এরপর বেশ কয়েক দফা নির্বাচনের আয়োজন হলেও তা বাতিল হয়।
আপনার মতামত লিখুন :