১৯৬৭ সালের জুন। পশ্চিম এশিয়ায় তখন ভয়ঙ্কর উত্তেজনা। একদিকে ইসরায়েল, অন্যদিকে জর্ডান, মিশর, ইরাক ও সিরিয়ার সামরিক জোট। শুরু হয়েছিল ছয় দিনের যুদ্ধ। সেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মাঝে এক বাঙালি পাইলট হয়ে উঠেছিলেন আরব বিমান বাহিনীর আশার আলো। তার নাম সাইফুল আজম।
তৎকালীন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ছিলেন সাইফুল। পরে স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত সৈনিক। কিন্তু ইতিহাসে তার সবচেয়ে গর্বের অধ্যায় লেখা হয়েছিল ১৯৬৭ সালের সেই যুদ্ধে, যখন তিনি একাই গুলি করে নামিয়ে দিয়েছিলেন চার চারটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাতের পরিস্থিতিতে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে তার কথা।
৫ জুন, ১৯৬৭। জর্ডানের মাফরাক বিমানঘাঁটির আকাশে হানা দেয় ইসরায়েলের চারটি ফাইটার জেট। উদ্দেশ্য, ছোট জর্ডানের বিমান-শক্তিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু সেই দিনই সাইফুল আজম তার হান্টার জেটে চড়ে একটি ইসরায়েলি মিস্টেয়ার ফাইটার গুলি করে উড়িয়ে দেন।
এরপর ৭ জুন, ইরাকের হয়ে লড়তে গিয়ে আরও দুটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গুঁড়িয়ে দেন তিনি। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দাবি, তার আগে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে ভারতীয় একটি বিমানকেও নামিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর তৎকালীন লেফটেন্যান্ট সাইফুল। যুদ্ধে দক্ষতা ও সাহসিকতার জন্য তিনি ‘সিতারা-ই-জুরাত’ পদকে সম্মানিত করা হয়েছিল তাকে।
পাকিস্তান, জর্ডান, ইরাক ও পরবর্তীকালে বাংলাদেশ—এই চার দেশের বিমান বাহিনীতে কাজ করেছেন সাইফুল আজম। তার এই অনন্য কৃতিত্বের স্বীকৃতি দেয় সমস্ত আরব বিশ্ব। জর্ডান তাকে সম্মান জানায় ‘উইসাম আল-ইসতিকলাল’ পদকে, ইরাক ‘নুত আল-সুজাত’ এবং পাকিস্তান ‘সিতারা-ই-বাসালাত’ দিয়ে।
ইসরায়েলি এক পাইলট পরে স্মৃতিচারণে জানান, সাইফুল আজম যখন তার বিমানকে গুলি করে নামান, তখন তিনি প্যারাসুটে নেমে আসার সময় দেখেন, সাইফুল নিজের বিমানে রোল দিয়ে তাকে হাত নেড়ে সম্ভাষণ জানাচ্ছেন। চাইলেই তাকে গুলি করে হত্যা করতে পারতেন সইফুল, কিন্তু করেননি। এমন বীরত্ব ও মানবিকতা ইসরায়েলেও প্রশংসিত হয়।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ফিরে সাইফুল আজম যোগ দেন দেশের বিমান বাহিনীতে। ২০০১ সালে তাকে ‘লিভিং ঈগল’ উপাধিতে সম্মানিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল হল অব ফেম। পরে রাজনীতিতেও সফল হন। পাবনা থেকে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হন তিনি।
২০২০ সালে তার মৃত্যুর পরে ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয় তার বীরত্বের স্মরণিকা। সেই পাইলট, যিনি শুধু শত্রুকে নামিয়ে দেননি, এক আদর্শ যোদ্ধার মতো শত্রুর প্রাণও বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন