শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জুবায়ের দুখু

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৫, ০৩:২৯ পিএম

বিশ্লেষণ

সুদানে গণহত্যার ইন্ধন দিচ্ছে এক মুসলিম দেশ?

জুবায়ের দুখু

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৫, ০৩:২৯ পিএম

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এল-ফাশার দখলের পর গণহত্যা, ধর্ষণ এবং লুটপাট হচ্ছে। ছবি- সংগৃহীত

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এল-ফাশার দখলের পর গণহত্যা, ধর্ষণ এবং লুটপাট হচ্ছে। ছবি- সংগৃহীত

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এল-ফাশার দখলের পর সেখানে গণহত্যা, ধর্ষণ এবং লুটপাটের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রক্তাক্ত ঘটনার মাধ্যমে সুদানের গৃহযুদ্ধে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ভূমিকা আবারও আলোচনায় এসেছে।

আরএসএফের নৃশংসতা ও যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

গত সপ্তাহে আধাসামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এল-ফাশারের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর থেকেই সেখানে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও মানবিক কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক গবেষণা ল্যাবের পরিচালক নাথানিয়েল রেমন্ড এ ঘটনাকে ‘রোয়ান্ডা-স্তরের গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছেন। স্যাটেলাইট ছবিতেও মাটিতে রক্তের চিহ্ন স্পষ্ট দেখা গেছে।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ এরই মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। এল-ফাশারের পতনের আগে শহরটি ৫০০ দিনেরও বেশি সময় অবরুদ্ধ ছিল।

আরএসএফ ও এর উত্থান

আরএসএফ গঠিত হয় ২০১৩ সালে, বশির সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত জানজাউইদ মিলিশিয়া থেকে। এই জানজাউইদ বাহিনী ২০০০ সালের গোড়ার দিকে দারফুরে গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে কুখ্যাত হয়ে ওঠে।

আরএসএফের নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি ‘হেমেতি’ নামে পরিচিত, এখন সুদানের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন। তার পরিবারের মালিকানাধীন আল জুনাইদ হোল্ডিং সোনা রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছে, যার বড় অংশ দুবাইয়ের বাজারে পাচার হয় বলে সুইসএইড জানিয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ

সুদানের সেনা-সমর্থিত সরকার, অস্ত্র পর্যবেক্ষক এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বারবার সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আরএসএফকে অস্ত্র ও অর্থায়নের মাধ্যমে সহায়তার অভিযোগ করেছে।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ প্যানেল ২০২৪ সালে ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ উপস্থাপন করে যে, চাদের মাধ্যমে ইউএই আরএসএফকে অস্ত্র পাঠিয়েছে। বুলগেরিয়া জানিয়েছে, সুদানে ধরা পড়া মর্টার রাউন্ডগুলো আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রপ্তানি করা হয়েছিল- কিন্তু পুনঃরপ্তানির অনুমতি নেওয়া হয়নি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০২৫ সালের মে মাসে জানায়, গাইডেড মিসাইল ও হাউইটজারসহ উন্নত চীনা অস্ত্র ‘প্রায় নিশ্চিতভাবেই’ ইউএই থেকে আরএসএফে পৌঁছেছে। একই বছর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও নিশ্চিত করেছে যে ইউএই আরএসএফকে চীনা ড্রোন ও অস্ত্র ব্যবস্থা সরবরাহ করছে।

এদিকে আবুধাবি এসব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে বলেছে, ‘আমরা কোনো পক্ষকে সহায়তা দিইনি, বরং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছি।’ তবে, একজন প্রাক্তন জাতিসংঘ অস্ত্র বিশেষজ্ঞ বলেছেন, আমিরাতের এই অস্বীকার ‘ভূ-কৌশলগত গ্যাসলাইটিং’ ছাড়া কিছু নয়।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক কয়েকটি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যারা আরএসএফকে সামরিক সরঞ্জাম ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। একই সঙ্গে মার্কিন কংগ্রেসে প্রস্তাব ওঠে, আরএসএফকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা এবং ইউএই-তে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।

যুদ্ধবিরতির আলোচনা

ওয়াশিংটনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও সৌদি আরবের কোয়াড গ্রুপের মধ্যে সুদানে দেড় বছরের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। পশ্চিম দারফুরের এল-ফাশের শহরে সাম্প্রতিক গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে মার্কিন নেতৃত্বাধীন মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাবিত তিন মাসের মানবিক যুদ্ধবিরতি মেনে নিয়েছে আরএসএফ।

ইউএই-এর কৌশলগত স্বার্থ

বিশ্লেষকদের মতে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সুদানে জড়িত থাকার পেছনে রয়েছে কৌশলগত ও বাণিজ্যিক স্বার্থ। সুদানের লোহিত সাগর উপকূলে বন্দর, কৃষিজমি ও সোনার খনিতে তাদের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। ইউএই-এর রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড লোহিত সাগরের আবু আমামা বন্দরে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছিল, যা ২০২৪ সালের নভেম্বরে কার্যকর হয়।

এছাড়া, ইউএই-এর কোম্পানিগুলো বর্তমানে সুদানে ৫০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে কৃষিকাজ করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বিনিয়োগ ও প্রভাব ধরে রাখতে আমিরাত আরএসএফকে ‘নিজেদের পক্ষের শক্তি’ হিসেবে দেখে।

ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রভাব

সুদানের সেনাবাহিনী ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্ত- যা সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে উদ্বেগের বিষয়। আমিরাতের বিশ্লেষক আব্দুল খালেক আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই যুদ্ধ ইসলামপন্থিদের ফিরে আসা ঠেকানোর লড়াই। ইউএই কেবল অস্ত্র নয়, সুদানের জনগণকেও সহায়তা দিচ্ছে।’

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও নীরবতা

সুদানের সরকার ২০২৫ সালের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইউএই-এর বিরুদ্ধে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনে, কিন্তু আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়। ব্রিটেন, মিশর, সৌদি আরবসহ কোয়াড সদস্যরা ইউএই-এর ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ্যে খুব বেশি কথা বলেনি।

দ্য গার্ডিয়ানের তথ্যমতে, ব্রিটিশ সরকার এমনকি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে সুদানে ইউএই-এর ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য না করতে।

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিশর, সৌদি আরব ও ইউএই-এর সঙ্গে যৌথভাবে একটি তিন মাসের মানবিক যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, যা  অবশেষে গতকাল কার্যকর হয়।

Link copied!