ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আগে কাশ্মীরে সাধারণ মানুষের অবস্থা ছিল খুবই ভয়ানক।
শ্রীনগরের এক এলাকায় ৬২ বছর বয়সী হাজিরা রেশন নিতে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। চারপাশে অনিশ্চয়তা, মাথার ওপর ড্রোন উড়ছে, বারবার বিস্ফোরণের শব্দ, বিমানবন্দর বন্ধ।
এসবের মাঝেও তিনি পরিবার চালানোর জন্য সরকার থেকে দেওয়া চাল-ডালের অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি শুধু আমার জিনিসগুলো নিয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরতে চাই। যুদ্ধ আসছে।’
বিকেলে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন, তখন অনেকেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। হাজিরা বলেন, ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ, কারণ যুদ্ধ হলে আমরা সেটা সামাল দিতে পারতাম না।’
মানুষ আতঙ্কে, আশ্রয় নিচ্ছে দূরের এলাকায়
কাশ্মীর সীমান্তে বসবাসকারী অনেক মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। পাকিস্তানের গোলা এসে পড়েছে অনেক গ্রামে, মানুষ আহত হয়েছে, বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে।
উরি নামে এক পাহাড়ি এলাকায় একজন নারী গাড়িতে পালানোর সময় নিহত হন। আরেকজন সাবেক সেনা সদস্য বলেন, ‘আমার বাড়ির এক পাশ উড়ে গেছে। আমার মেয়েরা আর ফিরে আসতে চায় না।’
ড্রোন ভূপাতিত করার সময় আকাশে আগুনের লাল রেখা দেখা গেছে। অনেকে বাড়ির ছাদে উঠে সেগুলো দেখেছেন। কেউ কেউ ভিডিওও করেছেন। সাইরেন বেজে উঠলে সবাই ভয়ে আশ্রয় খুঁজেছেন।
ফিরে আসছে পুরনো ভয়
কাশ্মীরের বাসিন্দারা বলছেন, এই ধরনের ভয় তারা আগে কখনও পাননি। অনেকের মতে, ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের পর এমন আতঙ্ক আর আসেনি।
যুদ্ধবিরতির পরও কিছু সময় পরেই গোলাগুলি শুরু হয়। উরির এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা জানি না যুদ্ধবিরতি কতদিন থাকবে। আমরা শুধু চাই যেন এটা সত্যিই স্থায়ী হয়।’
রাজনৈতিক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে
যদিও যুদ্ধবিরতি হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। কাশ্মীরের অনেক মানুষ মনে করে, তাদের কথা কেউ শুনছে না।
কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক বলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষ অপমানিত বোধ করে, কারণ তাদের মতামতের কোন দাম দেওয়া হয়নি।’
একজন সাধারণ কাশ্মীরি বলেন, ‘আমরা বুঝি না আমাদের অনুভূতির কোন মূল্য আছে কি না। দুই দেশের জন্যই আমরা শুধু ভোগ করছি।’