ইসরায়েলে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে গাজায় ত্রাণ সরবারের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হয়েছি। তা সত্ত্বেও ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের মাধ্যমে পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে ইসরায়েল।
সোমবার (১৯ মে) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
গত শুক্রবার নতুন স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণা দেওয়া ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সোমবার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরের বাসিন্দাদের অবিলম্বে উপকূলে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছে। কারণ তারা ‘একটি অভূতপূর্ব আক্রমণ’ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানায়।
নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘প্রচণ্ড লড়াই চলছে, আমরা পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছি।’ গাজায় থাকা ৫৮ জিম্মিকে মুক্তি ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূল করার মাধ্যমে ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
সেনাবাহিনী যখন হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছিল, তখনো রয়টার্সের সাংবাদিকরা দুর্ভিক্ষের প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিলেন। ফলে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহু সীমিত পরিমাণে সাহায্যের অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছেন। এরপর উত্তর গাজার দিকে ত্রাণের ট্রাকগুলো যেতে দেখা গেছে।
মার্কিন সিনেটররা অর্থাৎ যারা বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলের সমর্থক হিসেবে পরিচিত, তাদের সম্বোধন করে নেতানিয়াহু বলেন, ‘গোটা বিশ্বের তারা আমাদের সেরা বন্ধু’।
তিনি বলেন, ‘ক্ষুধার দৃশ্য গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন হ্রাস করছে এবং ইসরায়েলকে ‘লাল রেখার কাছাকাছি, এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে আমরা নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারি’।
নেতানিয়াহু তার সরকারের উগ্র ডানপন্থি নেতাদের উদ্দেশ্যে এক বার্তায় বলেন, ‘এ কারণেই বিজয় অর্জনের জন্য আমাদের যেকোনোভাবে সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
স্থানীয় চিকিৎসকদের মতে, রাতারাতি ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। কারণ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গত ২৪ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে ১৬০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি ট্যাঙ্ক সিস্টেম, ভূগর্ভস্থ টানেল ও অস্ত্রাগার।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ‘অপারেশন গিডিয়নস চ্যারিটস’ নামে একটি নতুন অভিযানে নিয়োজিত বাহিনী গাজায় তীব্র আক্রমণ চালাচ্ছে। হামাসের সামরিক ও শাসন ক্ষমতা নির্মূল করতে ও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে আটক বাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে এই অভিযান বলে দাবি তাদের।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় রোববার সন্ধ্যায় সাহায্য অবরোধ শিথিল করার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, ইসরায়েল সীমিত পরিমাণে খাদ্য গাজায় প্রবেশ করতে দেবে।
ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সোমবারের পরে ৫০টি ট্রাক আটা, রান্নার তেল ও ডাল বোঝাই ছোট উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নয়টি ট্রাক শিশু খাদ্য নিয়ে প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দুই মাস ধরে চলমান যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের কিছুক্ষণ আগে মার্চ মাসে মানবিক সহায়তা প্রদানের ওপর অবরোধ আরোপের কারণে ইসরায়েল ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের সম্মুখীন হয়েছে। কারণ সাহায্য সংস্থাগুলো ২৩ লাখ মানুষের ছোট্ট এলাকাটিতে দুর্ভিক্ষের সতর্কবার্তা দিয়েছে।
সাহায্য বিতরণের সঙ্গে জড়িত একটি পরিবহন সংস্থার মালিক নাহেদ শেইবার গাজাবাসীদের ট্রাকগুলোকে আটকানো বা লুট না করার আহ্বান জানিয়েছেন।