দীর্ঘদিন ধরে চলমান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বিপর্যস্ত সুদানে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। তিনি এতদিন কার্যত দেশটির শাসক হিসেবেই আসীন ছিলেন।
খার্তুম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, সোমবার সেনাশাসিত অন্তর্বর্তী সার্বভৌম পরিষদের এক ঘোষণায় জানানো হয়, জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা কামিল ইদ্রিসকে দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ঘোষণায় বলা হয়, ‘সার্বভৌম পরিষদের চেয়ারম্যান একটি সাংবিধানিক ডিক্রি জারি করে কামিল আল-তায়েব ইদ্রিস আবদেল হাফিজকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।’
কূটনীতিক হিসেবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে কামিল ইদ্রিসের। তিনি জাতিসংঘের বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) মহাপরিচালক ছিলেন ও সুদানের জাতিসংঘ স্থায়ী মিশনে কাজ করেছেন।
ইদ্রিস ২০১০ সালে ইসলামপন্থী সামরিক শাসক ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানে সেনাপ্রধান বুরহানের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর সঙ্গে আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) রক্তক্ষয়ী লড়াই চলছে। আরএসএফের নেতৃত্বে রয়েছেন বুরহানের সাবেক উপ-প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগলু।
এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত লাখো মানুষ নিহত হয়েছেন, গৃহচ্যুত হয়েছেন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ এবং জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে অভিহিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইদ্রিস এপ্রিলের শেষ দিকে বুরহানের নিযুক্ত দাফাল্লাহ আল-হাজ আলির স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। দাফাল্লাহ আল-হাজ আলি মাত্র তিন সপ্তাহ দায়িত্বে ছিলেন।
এর আগে, বুরহান বলেছিলেন, তিনি একটি যুদ্ধকালীন টেকনোক্র্যাট সরকার গঠন করবেন, যাতে ‘সামরিক লক্ষ্য পূরণের বাকি কাজ, বিদ্রোহীদের কবল থেকে সুদানকে মুক্ত করা, সম্পন্ন করা যায়’।
অন্যদিকে এপ্রিলেই আরএসএফ ঘোষণা দেয়, তারা একটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার গঠন করবে। এর আগে, কেনিয়ায় সামরিক ও রাজনৈতিক মিত্রদের একটি জোটের সঙ্গে একটি সনদে স্বাক্ষর করে তারা।
এই পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, সুদান হয়তো স্থায়ীভাবে বিভক্ত হয়ে পড়বে, যেখানে উভয় পক্ষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
ইতোমধ্যে এই সংঘাত সুদানকে কার্যত বিভক্ত করে ফেলেছে, দেশটির উত্তর, পূর্ব ও কেন্দ্রীয় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে সেনাবাহিনী, আর দারফুরসহ দক্ষিণের একাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে আরএসএফ ও তাদের মিত্ররা।