ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে বড় ধরনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে সব মার্কিন সামরিক ঘাঁটি সক্রিয় করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকা কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ঘাঁটি পরিচালনা করে আসছে।
শনিবার (১৪ জুন) ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ইরানে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা এবং তেহরানের পাল্টা আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে সব ঘাঁটিকে সক্রিয় থাকতে নির্দেশ জারি করা হয়েছে। যেকোনো সময় হুমকি মোকাবিলায় বা শত্রুপক্ষে আঘাত হানতে ঘাঁটিগুলোকে সজাগ ও সক্ষম রাখা হয়েছে।
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস অনুসারে, আমেরিকা এই অঞ্চলের কমপক্ষে ১৯টি স্থানে স্থায়ী এবং অস্থায়ী উভয় ধরনের সামরিক ঘাঁটির একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এর মধ্যে আটটি স্থায়ী ঘাঁটি বাহরাইন, মিশর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত।
এসব ঘাঁটির সক্ষমতার পাশাপাশি বাইরে থেকে যুদ্ধজাহাজ আনা হচ্ছে। ইরানের বিরুদ্ধে সে যুদ্ধজাহাজ কাজে লাগানো হতে পারে। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম ধ্বংসকারী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস টমাস হাডনারকে পশ্চিম ভূমধ্যসাগর থেকে পূর্ব ভূমধ্যসাগরের দিকে যাত্রা শুরু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী জাহাজকেও অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে হোয়াইট হাউসের অনুরোধে তা প্রস্তুত থাকতে পারে।
অন্যদিকে, বিমান ঘাঁটিগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে বিষয়গুলো এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। এখনো এসব চলমান সামরিক অভিযানের অংশ।
এর আগে, পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলার জবাবে ইসরায়েলে ‘শত শত বিভিন্ন ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ নিক্ষেপ করেছে ইরান।
সংবাদ সংস্থা তাসনিমের খবরে আরও বলা হয়েছে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এবং দুজন পারমাণবিক বিজ্ঞানীও নিহত হয়েছেন। নিহত দুই পরমাণু বিজ্ঞানী হলেন মোহাম্মদ মেদহি তেহরানচি ও ফেরেইদুন আব্বাসি।
এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর একটি আবাসিক ভবনে চালানো হামলায় নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা আলি শামখানি হামলায় ‘গুরুতর আহত’ হয়েছেন বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ জানিয়েছে। তবে খামেনি সুস্থ আছেন, তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
এদিকে, এক বিবৃতিতে খামেনি বলেন, ইহুদিবাদী সরকার আমাদের প্রিয় দেশের বুকে তার রক্তাক্ত ও কলুষিত হাত বিস্তার করেছে, আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে আগের থেকেও স্পষ্টভাবে তার বর্বর স্বভাব প্রকাশ করেছে। এর জন্য তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতেই হবে।
তিনি বলেন, এই হামলার মাধ্যমে ইহুদিবাদীরা নিজেদের জন্য এক তিক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি ডেকে এনেছে, এবং তা তাদের ভোগ করতেই হবে।
তিনি বলেন, ‘শত্রুর এই আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী শহীদ হয়েছেন। তবে ইনশাআল্লাহ, তাদের স্থলাভিষিক্তরা দ্রুতই সেই দায়িত্ব তুলে নিয়ে কাজ শুরু করবেন। ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনী আল্লাহর ইচ্ছায় ইসরায়েলের মতো শত্রুদের কখনো ছাড় দেবে না।’
এদিক, ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই হামলাটি উচ্চমানের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে এবং এর মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা। দুই ডজনেরও বেশি জেট বিমানের সমন্বয়ে পরিচালিত এই অভিযান ছিল নিখুঁতভাবে পরিকল্পিত এবং সুনির্দিষ্ট।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছেন, এই হামলার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক সক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় করা। যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ এই অভিযান অব্যাহত থাকবে, যতক্ষণ না আমরা মিশনটি সম্পন্ন করি।
হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল নিজের ভূখণ্ডেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। দেশটির সামরিক মুখপাত্রের দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় ভোর ৩টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষামূলক কার্যক্রম, সমাবেশ এবং কর্মক্ষেত্রের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে- প্রয়োজনীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দেশের প্রতিরক্ষা নীতিতে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। সব অঞ্চলকে পূর্ণ কার্যক্রম স্তর থেকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম স্তরে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে, ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, মার্কিন সেনাবাহিনী এই অভিযানে কোনো ভূমিকা পালন করেনি।
এ ছাড়া ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে বলে আবারও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক বোমা থাকতে পারে না এবং আমরা আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আশা করছি।’
আপনার মতামত লিখুন :