ঢাকা রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

এবার গাজা থেকে ইসরায়েলে হামলা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৫, ০৪:১৯ পিএম
গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা। ছবি: সংগৃহীত

পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলার জবাবে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে ‘শত শত বিভিন্ন ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ নিক্ষেপ করেছে ইরান। এমন পরিস্থিতিতে গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানোর খবর পাওয়া গেছে ।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজার চারপাশে স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ১০টা থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। 

এদিন দুটি রকেট একটি খোলা জায়গায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে বলে জানায় সেনাবাহিনী। তবে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে রাতভর তীব্র হামলা পাল্টা হামলার পর গাজা থেকে এই  রকেট হামলা চালানো হয়।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জাত আল রিশেক বলেন, আগ্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে বিনা শাস্তিতে যে পার পাওয়া যায় না, তা ইরান প্রমাণ করে দিয়েছে। শনিবার ইসরায়েলে ইরানের পাল্টা হামলার পর তিনি এ কথা বলেন। 

তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলকে শক্ত জবাব দেয়ার মধ্য দিয়ে ইরান প্রমাণ করেছে, কোনো ঔদ্ধত্যই বিনা জবাবে পার পায় না, কোনো আগ্রাসনই শাস্তি ছাড়া পার পায় না।’

রিশেক বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যত উচ্চ ধারণাই থাকুক না কেন, ডজন ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ঠিকই ভূখণ্ডটির ভেতরে ঢুকে সফলভাবে লক্ষ্যভেদ করেছে। ইসরায়েলকে জবাব দেয়ার মধ্য দিয়ে ইরান একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। আর তা হলো—যে–ই হামলা করুক, তাকে মূল্য চুকাতে হবে।

এর আগে, পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলার জবাবে ইসরায়েলে ‘শত শত বিভিন্ন ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ নিক্ষেপ করেছে ইরান।

সংবাদ সংস্থা তাসনিমের খবরে আরও বলা হয়েছে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এবং দুজন পারমাণবিক বিজ্ঞানীও নিহত হয়েছেন। নিহত দুই পরমাণু বিজ্ঞানী হলেন মোহাম্মদ মেদহি তেহরানচি ও ফেরেইদুন আব্বাসি।

এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর একটি আবাসিক ভবনে চালানো হামলায় নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়া ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা আলি শামখানি হামলায় ‘গুরুতর আহত’ হয়েছেন বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ জানিয়েছে। তবে খামেনি সুস্থ আছেন, তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

এদিকে, এক বিবৃতিতে খামেনি বলেন, ইহুদিবাদী সরকার আমাদের প্রিয় দেশের বুকে তার রক্তাক্ত ও কলুষিত হাত বিস্তার করেছে, আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে আগের থেকেও স্পষ্টভাবে তার বর্বর স্বভাব প্রকাশ করেছে। এর জন্য তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতেই হবে।

তিনি বলেন, এই হামলার মাধ্যমে ইহুদিবাদীরা নিজেদের জন্য এক তিক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি ডেকে এনেছে, এবং তা তাদের ভোগ করতেই হবে।

তিনি বলেন, ‘শত্রুর এই আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী শহীদ হয়েছেন। তবে ইনশাআল্লাহ, তাদের স্থলাভিষিক্তরা দ্রুতই সেই দায়িত্ব তুলে নিয়ে কাজ শুরু করবেন। ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনী আল্লাহর ইচ্ছায় ইসরায়েলের মতো শত্রুদের কখনো ছাড় দেবে না।’

এদিক, ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই হামলাটি উচ্চমানের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে এবং এর মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা। দুই ডজনেরও বেশি জেট বিমানের সমন্বয়ে পরিচালিত এই অভিযান ছিল নিখুঁতভাবে পরিকল্পিত এবং সুনির্দিষ্ট।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছেন, এই হামলার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক সক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় করা। যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ এই অভিযান অব্যাহত থাকবে, যতক্ষণ না আমরা মিশনটি সম্পন্ন করি।

হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল নিজের ভূখণ্ডেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। দেশটির সামরিক মুখপাত্রের দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় ভোর ৩টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষামূলক কার্যক্রম, সমাবেশ এবং কর্মক্ষেত্রের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে- প্রয়োজনীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দেশের প্রতিরক্ষা নীতিতে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। সব অঞ্চলকে পূর্ণ কার্যক্রম স্তর থেকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম স্তরে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এদিকে, ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, মার্কিন সেনাবাহিনী এই অভিযানে কোনো ভূমিকা পালন করেনি। 

এ ছাড়া ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে বলে আবারও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।