চলমান উত্তেজনার মধ্যে ২০২৫ সালের সামরিক পরিসংখ্যানে ইরান ও ইসরায়েলের শক্তির তুলনামূলক চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। সংখ্যার বিচারে ইরান প্রায় সবক্ষেত্রে ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ, প্রতিরক্ষা বাজেট এবং কার্যকরী সামরিক দক্ষতায় পাল্লা ভারী জায়োনিস্ট রাষ্ট্রটির।
মানবসম্পদে ইরান স্পষ্টভাবে এগিয়ে
ইরানের মোট জনসংখ্যা ৮ কোটি ৮৮ লাখ, যেখানে ইসরায়েলের জনসংখ্যা মাত্র ৯৪ লাখ। সক্রিয় সেনাসদস্য আছে ইরানে ৬ লক্ষাধিক, ইসরায়েলে আছে ১ লাখ ৭০ হাজার। তবে রিজার্ভ ফোর্সে ইসরায়েল কিছুটা এগিয়ে-৪ লাখ ৬৫ হাজার, যেখানে ইরানের সংখ্যা ৩ লাখ ৫০ হাজার।
অর্থনীতির শক্তিতে ইসরায়েল বেশি বাজেট দেয় প্রতিরক্ষায়
ইরানের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট ১৫.৪৫ বিলিয়ন ডলার হলেও ইসরায়েল প্রায় দ্বিগুণ, ৩০.৫ বিলিয়ন ডলার বাজেট বরাদ্দ দেয়। ফলে উচ্চ প্রযুক্তি, আধুনিক সরঞ্জাম এবং রিয়েল-টাইম প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থায় ইসরায়েলের সুবিধা থাকে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ইসরায়েলের পরিমাণ বেশি-২০৪.৬ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ইরানের ১২০.৬ বিলিয়ন।
আকাশে তুলনামূলক আধিপত্য ইসরায়েলের
বিমান সংখ্যা অনুযায়ী ইসরায়েল ৬১১টি নিয়ে ইরানের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে (ইরানের ৫৫১টি)। যুদ্ধবিমানের সংখ্যায়ও ইসরায়েল এগিয়ে-২৪০টি, ইরানের আছে ১৮৮টি। হামলাবিমানে, ট্রেইনার প্লেনে এবং এয়ার রিফুয়েলিং ট্যাংকারেও ইসরায়েল এগিয়ে রয়েছে। তবে পরিবহন বিমানে ইরান এগিয়ে-৮৭টি, ইসরায়েলের মাত্র ১৩টি।
স্থল বাহিনীতে সংখ্যায় বিশাল পার্থক্য
ট্যাংকের সংখ্যা অনুযায়ী ইরানের আছে ১,৭১৩টি, যেখানে ইসরায়েলের রয়েছে ১,৩০০টি। ইরান সাঁজোয়া যান, টোড আর্টিলারি ও মোবাইল রকেট প্রজেক্টরের দিকেও অনেক এগিয়ে। বিশেষ করে মোবাইল রকেট প্রজেক্টরে ইরানের সংখ্যা ১,৫১৭, আর ইসরায়েলের মাত্র ১৮৩টি।
নৌ-শক্তিতে ইরান স্পষ্টভাবে প্রভাব বিস্তার করে
নৌবহরের মোট সংখ্যায় ইরান (১০৭) দ্বিগুণের বেশি এগিয়ে ইসরায়েলের (৬২) তুলনায়। বিশেষ করে সাবমেরিন, ফ্রিগেট ও মাইন ওয়ারফেয়ার ইউনিটে ইরান এগিয়ে। তবে করভেট ও পেট্রল ভেসেলের সংখ্যায় ইসরায়েল এগিয়ে আছে।
প্রাকৃতিক সম্পদে ইরান অপ্রতিরোধ্য
তেল ও গ্যাস রিজার্ভে ইরান বিশ্বসেরা অবস্থানে। প্রমাণিত তেল মজুদ আছে ২০৮.৬ বিলিয়ন ব্যারেল, গ্যাস মজুদ ৩৩,৯৮৭ বিলিয়ন ঘনফুট। ইসরায়েলের তুলনায় এটি কয়েক হাজার গুণ বেশি। এই সম্পদগুলো ইরানকে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ সক্ষমতা ও নিজস্ব জ্বালানি নির্ভরতার সুযোগ দেয়।
ভৌগোলিক পরিসরেও ইরানের আধিপত্য
ইরানের স্থলসীমা ১৬ লাখ ৪৮ হাজার বর্গকিলোমিটার, ইসরায়েলের মাত্র ২১ হাজার। ভূমির আকার ও বণ্টন যুদ্ধপরিস্থিতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ ও রিজার্ভ বাহিনীর মোতায়েনে ইরানকে বাড়তি সুবিধা দেয়।
নিচে ইরান ও ইসরায়েলের সামরিক শক্তির মূল দিকগুলো চার্ট আকারে দেওয়া হলো:
বিভাগ | ইরান | ইসরায়েল |
---|---|---|
জনসংখ্যা | ৮৮,৩৮৬,৯৩৭ | ৯,৪০২,৬১৭ |
সক্রিয় সেনা সদস্য | ৬১০,০০০ | ১৭০,০০০ |
রিজার্ভ সদস্য | ৩৫০,০০০ | ৪৬৫,০০০ |
প্রতিরক্ষা বাজেট | ১৫.৪৫ বিলিয়ন ডলার | ৩০.৫ বিলিয়ন ডলার |
মোট যুদ্ধবিমান | ৫৫১ | ৬১১ |
যুদ্ধবিমান (ফাইটার) | ১৮৮ | ২৪০ |
আক্রমণ হেলিকপ্টার | ১৩ | ৪৮ |
ট্যাংক সংখ্যা | ১,৭১৩ | ১,৩০০ |
রকেট প্রকল্পর সংখ্যা | ১,৫১৭ | ১৮৩ |
ফ্রিগেট জাহাজ | ৭ | ০ |
উভচর (সাবমেরিন) | ২৫ | ৫ |
ভূমির আয়তন (কিমি²) | ১,৬৪৮,১৯৫ | ২১,৯৩৭ |
কোস্টলাইন (কিমি) | ২,৪৪০ | ২৭৩ |
এই তুলনাটি ইরানের বৃহত্তর জনসংখ্যা ও স্থলভাগের বিপরীতে ইসরায়েলের আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা বাজেটের সুবিধাকে তুলে ধরে।
সব মিলিয়ে, কাগজে কলমে ইরানের সামরিক সংখ্যা ও ভৌগোলিক আয়তন অনেক বেশি হলেও ইসরায়েল তার প্রযুক্তি, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং উচ্চ বাজেট ব্যবহার করে কার্যকর প্রতিরক্ষায় শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে টিকে আছে।
তথ্যসূত্র: গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার, ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক, প্রতিরক্ষা পর্যালোচনা ২০২৫
আপনার মতামত লিখুন :