সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৫, ০৯:৩৪ পিএম

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ

ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ইরানের তেল-গ্যাস অবকাঠামো

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৫, ০৯:৩৪ পিএম

১৪ জুন ইরানের বুশেহর প্রদেশের কাঙ্গানে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্রের একটি শোধনাগারে আগুন ধরে যায়। ছবি- সংগৃহীত

১৪ জুন ইরানের বুশেহর প্রদেশের কাঙ্গানে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্রের একটি শোধনাগারে আগুন ধরে যায়। ছবি- সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলা প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল ও গ্যাস স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, যা এই প্রথমবারের মতো সংঘাত আরও বৃদ্ধি ও বিশ্ববাজারের জন্য অস্থিরতার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

শনিবার (১৪ জুন) রাতে ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ডিপোতে হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে রাজধানী তেহরানের আরেকটি তেল শোধনাগারেও আগুন লেগেছে, দমকলকর্মীরা পৃথক স্থানে আগুন নেভানোর জন্য তৎপর ছিল।

এদিন ইসরায়েলি হামলায় আগুন লাগার পর ইরান বিশ্বের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্র সাউথ পার্সের উৎপাদন আংশিকভাবে স্থগিত করেছে, যা তারা প্রতিবেশী কাতারের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে।

আগের দিন ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করার পর সর্বশেষ দফায় প্রজেক্টাইল বিনিময় শুরু হয়। উত্তেজনা কমানোর জন্য বিশ্বব্যাপী আহ্বানের মধ্যে তেহরান ইসরায়েলের একাধিক শহরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে প্রতিশোধ নেয়।

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মতে, গত দুই দিনে ইসরায়েলি হামলায় ২০ শিশু-সহ কমপক্ষে ১৪০ জন নিহত এবং ৮০০ জন আহত হয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানি হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে, ২৪০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।

ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলের অভূতপূর্ব ও আকস্মিক আক্রমণ মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সরবরাহ ব্যাহত করছে, এবং বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দামকে নাড়া দিতে পারে। যদিও উভয় দেশ একে অপরকে আরও তীব্র আক্রমণের হুমকি দিচ্ছে।

ইসরায়েলি হামলায় ইরানের কোন কোন জ্বালানি কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসন (ইআইএ) অনুসারে, ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রমাণিত প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ও তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেলের মজুদ করে এবং এর জ্বালানি অবকাঠামো দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের জন্য একটি সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু।

বর্তমান সংকটের আগে ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা এড়িয়ে চলেছিল ইসরায়েল। কারণ এই ধরনের আক্রমণের ফলে বিশ্বব্যাপী তেল ও গ্যাসের দামের ঝুঁকির বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্রদের চাপ ছিল।

তবে এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে।

শুক্রবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, যদি ইরান তাদের আক্রমণের প্রতিশোধ নেয়, তাহলে ‘তেহরান পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে’।

পরদিন শেষের দিকে, ইরানের রাজধানীর দুটি বিপরীত প্রান্তে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে- মধ্য তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত শাহরান জ্বালানি ও গ্যাস ডিপো এবং শহরের দক্ষিণে অবস্থিত শাহর রে-তে ইরানের বৃহত্তম তেল শোধনাগারগুলোর মধ্যে একটি।

ইরানের স্টুডেন্ট নিউজ নেটওয়ার্ক পরবর্তীতে শাহর রে শোধনাগারে ইসরায়েলের হামলার কথা অস্বীকার করে জানিয়েছে, এটি এখনো চালু রয়েছে। তবে তারা স্বীকার করে যে, শোধনাগারের বাইরে একটি জ্বালানি ট্যাঙ্কে আগুন লেগেছে। আগুনের সূত্রপাতের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি।

তবে ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল শাহরান ডিপোতে হামলা চালিয়েছে, যেখানে দমকলকর্মীরা এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশের উপকূলবর্তী দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্রও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। বিশ্বের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্রটি ইরানের গ্যাস উৎপাদনের দুই-তৃতীয়াংশের উৎস, যা জাতীয়ভাবে ব্যবহৃত হয়। ইরান তার প্রতিবেশী কাতারের সঙ্গে দক্ষিণ পার্স ভাগ করে নেয়, যেখানে এটিকে উত্তর ক্ষেত্র বলা হয়।

আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, এই হামলার ফলে ফেজ-১৪ প্রাকৃতিক গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ সুবিধায় উল্লেখযোগ্য ক্ষতি ও আগুন লেগেছে। একটি অফশোর উৎপাদন প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেছে, যা প্রতিদিন ১২ মিলিয়ন ঘনমিটার উৎপাদন করে।

ইসরায়েলি আরেকটি পৃথক হামলায় ইরানের বৃহত্তম প্রক্রিয়াকরণ সুবিধাগুলোর মধ্যে একটি ফজর জাম গ্যাস প্ল্যান্টে আগুন লেগেছে বলে জানা গেছে। এটি বুশেহর প্রদেশেও অবস্থিত, যা দক্ষিণ পার্স থেকে জ্বালানি প্রক্রিয়াজাত করে। ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে এই সুবিধাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কেন এই স্থানগুলো গুরুত্বপূর্ণ?

শাহরান তেল ডিপো তেহরানের বৃহত্তম জ্বালানি সংরক্ষণ এবং বিতরণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি। এর ১১টি ট্যাঙ্কে প্রায় ২৬০ মিলিয়ন লিটার স্টোরেজ ক্ষমতা রয়েছে। এটি রাজধানীর শহুরে জ্বালানি গ্রিডের একটি গুরুত্বপূর্ণ নোড, যা উত্তর তেহরানের বেশ কয়েকটি টার্মিনালে পেট্রোল, ডিজেল এবং বিমান জ্বালানি বিতরণ করে।

তেহরানের দক্ষিণে শাহর-ই রে জেলায় অবস্থিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেহরান তেল পরিশোধন কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত তেহরান রিফাইনারি দেশটির প্রাচীনতম শোধনাগারগুলোর মধ্যে একটি, যার পরিশোধন ক্ষমতা প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার ব্যারেল।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই সাইটে যেকোনো ব্যাঘাত অর্থাৎ আগুনের কারণ যাই হোক না কেন ইরানের সবচেয়ে জনবহুল এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে জ্বালানি সরবরাহের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

দক্ষিণে উপসাগরের অফশোর সাউথ পার্স গ্যাসফিল্ডে আনুমানিক এক হাজার ২৬০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী গ্যাস রিজার্ভের প্রায় ২০ শতাংশ।

এদিকে, বুশেহর প্রদেশে ফজর-ই জাম গ্যাস শোধনাগারে আঘাত হানার ফলে ইরানের অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ও মধ্য প্রদেশগুলোতে, যেগুলো ইতোমধ্যেই বিশাল চাপের মধ্যে রয়েছে। সরকারের অনুমান অনুসারে, ইরানে ব্ল্যাকআউটের ফলে অর্থনীতিতে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়।

অনিশ্চিত বিশ্ব বাজার

বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তার বিষয়টি উল্লেখ করে ইসরায়েলের সঙ্গে তীব্রতর সংঘাতের মধ্যে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার কথা বিবেচনা করছে ইরান। যদি তেহরান এই পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে।

হরমুজ প্রণালী একদিকে ইরান, অন্যদিকে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বিভক্ত করেছে। পারস্য উপসাগরে প্রবেশের একমাত্র সামুদ্রিক প্রবেশপথ এই প্রণালী, যার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী তেল ব্যবহারের প্রায় ২০ শতাংশ প্রবাহিত হয়। ইআইএ এই প্রণালীকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহনের বাধা’ হিসেবে বর্ণনা করে।

শুক্রবারের ইসরায়েলি হামলায় (যুদ্ধের প্রথম দিনে) ইরানের তেল ও গ্যাস স্থাপনাগুলো রক্ষা পেয়েলেও তেলের দাম ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। যদিও তা এখনো অস্থির। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, সোমবার (১৬ জুন) তেলের বাজার আবার খোলার সময় দাম তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাবে।

মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের বিশিষ্ট কূটনৈতিক ফেলো অ্যালান আইয়ার আল-জাজিরাকে বলেছেন, ইসরায়েল ইরানের উপর আক্রমণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অংশগ্রহণের জন্য চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। ‘অবশেষে ইসরায়েলের সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতি হলো ইরানের যদি শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন না হয়, তবে এই শাসনব্যবস্থার পতনকে উৎসাহিত করা’।

তিনি  বলেন, ‘ইরানের বিকল্প খুবই সীমিত; অভ্যন্তরীণভাবে নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করার জন্য তাদের সামরিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। কিন্তু ইরান অভ্যন্তরীণভাবে ইসরায়েলের যথেষ্ট ক্ষতি করতে পারবে বা বোমা হামলা বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করতে পারবে, এমনটা খুবই কম।’

আইরে আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে ইরানের খুব বেশি মিত্র নেই। এবং যদি তা করেও থাকে তবুও ইসরায়েল দেখিয়েছে যে, তারা আন্তর্জাতিক মতামতকে অসাধারণভাবে অগ্রাহ্য করতে পারে।’

Link copied!