বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো যখন গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করছে, তখন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির দাবি করেছেন, ‘গাজায় প্রকৃত কোনো ক্ষুধা নেই।’
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় বেন গভির বলেন, ‘গাজায় যদি কেউ সত্যিই ক্ষুধার্ত হতো, তাহলে তারা ইসরায়েলি জিম্মিদের ফিরিয়ে দিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই হামাস ক্ষুধার্ত থাকুক।’
অতি-ডানপন্থী ‘জুয়িশ পাওয়ার পার্টির’ এই নেতা আগে থেকেই গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা বন্ধের পক্ষে কথা বলে আসছেন। গাজা দখল ও ফিলিস্তিনি জনগণকে সরিয়ে সেখানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের পক্ষে তিনি স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। তার এই বক্তব্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মানবিক সহায়তা বন্ধের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বেন গভিরের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং ১০০টিরও বেশি এনজিও গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ টানা কয়েকদিন কোনো খাবার পাচ্ছে না, এবং এক-চতুর্থাংশ জনগণ চরম খাদ্য সংকটে রয়েছে। এদের মধ্যে ১ লাখ নারী ও শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় সংস্থা গাজাকে বর্তমানে বিশ্বের একমাত্র অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যেখানে প্রায় শতভাগ মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টি ও দুর্ভিক্ষজনিত কারণে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ক্ষুধার কারণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২২ জনে, এর মধ্যে ৮৩ জনই শিশু।
বিশ্লেষক ও মানবাধিকার কর্মীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, গাজার সীমান্ত ক্রসিংগুলো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকায় খাদ্য, চিকিৎসা ও অন্যান্য জরুরি সহায়তা প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :