বেসরকারি আর্থসামাজিক উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত তিনটি ভাসমান শিক্ষা তরী বর্তমানে অবস্থান করছে বরিশালের আগৈলঝাড়ার পয়সা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের সামনের সন্ধ্যা নদীতে। দেশের নদী-অববাহিকাযুক্ত বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ঘুরে বেড়িয়ে এই তরীগুলো প্রথম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, গণিত ও মূল্যবোধ বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা প্রদান করছে।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভাসমান শিক্ষা তরীগুলোতে ৬ জন নারী শিক্ষিকা তিনটি বিষয়ের পাঠদান করছেন। প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থী এই শিক্ষা তরীতে এসে অতিরিক্ত শিক্ষায় অংশ নিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে রয়েছে রেলিংসহ প্রশস্ত স্টিলের তৈরি সিঁড়ি।
সরেজমিনে দেখা যায়, পয়সা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের সামনের সন্ধ্যা নদীতে নোঙর করে রাখা তিনটি ভাসমান তরীতে শিক্ষিকারা আলাদা আলাদাভাবে পাঠদান করছেন। বিজ্ঞান বিষয়ে নাইমা হক ও হাফিজা খানম, গণিত বিষয়ে মালিহা আক্তার ও মিথিলা আক্তার শাম্মি, মূল্যবোধ বিষয়ে কাজী লাবনী আক্তার ও আফসানা মিমি
শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরুর আগে, বিরতিতে এবং পরে ভাসমান তরীতে এসে আগ্রহ ও মনোযোগের সঙ্গে শিক্ষা গ্রহণ করছে, যা তাদের জন্য এক ব্যতিক্রমধর্মী ও কার্যকর অভিজ্ঞতা।
ব্র্যাকের শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ভাসমান শিক্ষা তরীর যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে দেশের নদীঘেরা প্রায় ১৪-১৫টি জেলা ও বরিশালের বাগধা, বিশারকান্দি, মরিচবুনিয়া, বৈঠাঘাটা, বানারিপাড়া, উজিরপুর ও আগৈলঝাড়াসহ ৬০-৭০টি উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।
প্রতিটি শিক্ষা তরীর দৈর্ঘ্য ৪৩ ফুট ও প্রস্থ ১২ ফুট। স্টিলের তৈরি এ নৌযানগুলোতে রয়েছে প্রয়োজনীয় আসবাব, শিক্ষা উপকরণ ও প্রশিক্ষণের পরিবেশ। প্রতিটি তরীতে একজন প্রোগ্রাম অর্গানাইজার, ৬ জন মাঝি, ৬ জন শিক্ষক ও ২ জন স্টাফসহ মোট ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত আছেন।
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মো. মাহফুজ সিকদার বলেন, ‘আমি এখানে এসে ক্লাসের বাইরেও অনেক কিছু শিখছি, যা আমার জন্য খুবই উপকারি।’
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফসা খানম জানান, ‘শিক্ষা তরীতে এসে আমরা বিজ্ঞান, গণিত ও মূল্যবোধ বিষয়ে হাতে-কলমে অনেক কিছু শিখতে পারছি, যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগবে।’
নাইমা হক, বিজ্ঞান শিক্ষিকা বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের নিউটনের সূত্র, পেরিস্কোপ, আলোর প্রতিসরণ, দিন-রাত্রির পার্থক্য ও সৌরজগত সম্পর্কে হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়ে থাকি।’
মিথিলা আফরোজ শাম্মি, গণিত শিক্ষিকা জানান, ‘ভাগ, যোগ, গুণ, ভগ্নাংশ, পিথাগোরাসের উপপাদ্যসহ বিভিন্ন বিষয় শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার মাধ্যমে শেখানো হচ্ছে।’
আফসানা মিমি, মূল্যবোধ বিষয়ক শিক্ষিকা বলেন, ‘ছেলে-মেয়ে সমান, পরিবেশ রক্ষা, মানবিকতা, সামাজিক আচরণ ও বিভিন্ন নীতিভিত্তিক গল্পের মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।’
মো. সোহেল মোল্লা, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির প্রোগ্রাম অর্গানাইজার বলেন, ‘ব্র্যাকের ৫০ বছর পূর্তির অংশ হিসেবে চরাঞ্চল ও দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে এই ভাসমান শিক্ষা তরী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে যে ভয় রয়েছে তা দূর করা এবং মূল্যবোধ গড়ে তোলাই এই কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য।’
পয়সা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ব্র্যাকের ভাসমান তিনটি শিক্ষা তরী আমাদের বিদ্যালয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, গণিত ও মূল্যবোধ বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করছে। এজন্য আমি ব্র্যাক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’
আপনার মতামত লিখুন :