মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ১২:০৩ এএম

সবচেয়ে শক্তিশালী বাঙ্কার বাস্টার বোমা ‘গাজাপ’ প্রকাশ্যে আনল তুরস্ক

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ১২:০৩ এএম

‘রাশিয়ান ও মার্কিন বোমার প্রতিদ্বন্দ্বী’ তুরস্কের সুপার ‘গাজাপ’। ছবি- সংগৃহীত

‘রাশিয়ান ও মার্কিন বোমার প্রতিদ্বন্দ্বী’ তুরস্কের সুপার ‘গাজাপ’। ছবি- সংগৃহীত

তুরস্ক আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী অ-পারমাণবিক বোমা ‘গাজাপ’ (ক্রোধ) উন্মোচন করেছে। তুর্কি ভাষায় এর নাম ‘রাথ’। ৯৭০ কেজি (দুই হাজার পাউন্ড) ওজনের এই বোমাটি থার্মোবারিক ও উচ্চ-বিভাজন ক্ষমতাসম্পন্ন, আঘাতের সময় প্রায় ১০ হাজার ধাতব টুকরো ছড়িয়ে দিতে সক্ষম এবং একই সঙ্গে তীব্র অতিরিক্ত চাপ ও তাপ তরঙ্গ সৃষ্টি করে। এই বোমা বিশেষভাবে শক্তিশালী সামরিক স্থাপনা, ভূগর্ভস্থ টানেল, বাঙ্কার এবং শহুরে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে।

সোমবার (২৮ জুলাই) ইস্তাম্বুল ফেয়ার সেন্টারে শেষ হওয়া প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে ‘গাজাপ’ ও ‘হায়ালেট’ (ভূত) বোমা দুটি প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হয়েছে।

কেন্দ্রের পরিচালক নিলুফার কুজুলু জানিয়েছেন, ‘গাজাপ’ বোমা এবং এর সমপর্যায়ের আরেকটি মডেল যোগ্যতা ও সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। তিনি বলেন, ‘গাজাপ’ ২,০০০ পাউন্ডের একটি স্ট্যান্ডার্ড এমকে৮৪ বিমান বোমা। তবে প্রচলিত সংস্করণের বিপরীতে এতে ১০ হাজার ধাতব কণা সমন্বিত বিশেষ খণ্ড-ভিত্তিক কাঠামো রয়েছে, যা বিস্ফোরণের পর এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধে ছড়িয়ে পড়ে।’

কুজুলু আরও উল্লেখ করেন যে সাধারণত প্রচলিত অস্ত্র প্রতি বর্গমিটারে প্রায় তিনটি টুকরো ছড়ায়, কিন্তু ‘গাজাপ’ প্রতি বর্গমিটারে ১০ দশমিক ১৬টি টুকরো ছড়িয়ে দেয়। তার ভাষায়, ‘এটি স্ট্যান্ডার্ড এমকে-সিরিজের বোমার তুলনায় তিনগুণ বেশি শক্তিশালী।’ বোমাটিকে ‘সময়ের সেরা বাঙ্কার-বাস্টার’ হিসেবে দাবি করা হয়। বিশেষভাবে শক্তিশালী কংক্রিটের লক্ষ্যবস্তু ভেদ করার জন্য তৈরি।

ইস্তাম্বুল ফেয়ার সেন্টারে শেষ হওয়া প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে ‘গাজাপ’। ছবি- সংগৃহীত

ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া জানিয়েছে, ‘গাজাপ’ প্রচলিত গ্র্যাভিটি বোমার তুলনায় প্রতি মিটারে তিনটির পরিবর্তে ১০টি ফ্র্যাগমেন্টেশন বিস্তার ঘটায়, যা সম্পূর্ণ লক্ষ্য এলাকাকে ধ্বংসাত্মক শক্তি দিয়ে আচ্ছাদিত করতে পারে। এর থার্মোবারিক গঠন বায়ুমণ্ডলীয় অক্সিজেন টেনে দীর্ঘস্থায়ী বিস্ফোরণ ঘটায়, যা সীমিত স্থানের যুদ্ধক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকর। তুর্কি বিমানবাহিনীর এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন স্কোয়াড্রনে এটি ইতোমধ্যেই সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে তুরস্ককে তাৎক্ষণিক কৌশলগত গভীর আক্রমণের ক্ষমতা প্রদান করছে।

এই বোমার মাধ্যমে তুরস্ক এমন কিছু দেশের দলে যোগ দিল, যারা রাশিয়ান ওডাব/ ওডিএবি সিরিজ ও মার্কিন বিএলইউ-১১৮/বি-এর মতো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন থার্মোবারিক অস্ত্র মোতায়েন করতে সক্ষম। তুর্কি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা একে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অ-পারমাণবিক বোমা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটি তুরস্কের পূর্ববর্তী এনইবি-২ বাঙ্কার বাস্টারের চেয়েও ভারী এবং বিস্তৃত এলাকা দমন ও শত্রুর প্রতিরক্ষা ভেঙে দেওয়ার জন্য নকশা করা হয়েছে।

‘গাজাপ’-এর উন্মোচন তুরস্কের প্রতিরক্ষা কৌশলে একটি বড় পরিবর্তনের প্রতীক, যেখানে ন্যাটো নির্ভরশীলতা থেকে সরে এসে দেশীয় প্রযুক্তি দিয়ে আঞ্চলিক যুদ্ধক্ষেত্রের ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ভবিষ্যতের যেকোনো সংঘাতে তুরস্ককে পারমাণবিক বা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াই শত্রুর শক্ত ঘাঁটি ধ্বংস করার সুযোগ দেবে। সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া কিংবা কান্দিল পর্বতমালায় সম্ভাব্য অভিযানে এই বোমা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

বিশেষায়িত বিমান বা অতিরিক্ত লজিস্টিক সাপোর্ট ছাড়াই ‘গাজাপ’ আনাতোলিয়াজুড়ে তুর্কি বিমানবাহিনীর যেকোনো ঘাঁটি থেকে মোতায়েন করা যাবে। এটি এসওএম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, কেজিকে গ্লাইড কিট এবং অন্যান্য নির্ভুল-নির্দেশিত অস্ত্রের পাশাপাশি তুরস্কের আকাশ আধিপত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

প্রতিরক্ষা শিল্পের দ্রুত অগ্রগতি এবং দেশীয় উৎপাদনের সক্ষমতা প্রদর্শন করে ‘গাজাপ’-এর উন্মোচন, যা ভবিষ্যতে পাকিস্তান, আজারবাইজান, ইন্দোনেশিয়া, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো এফ-১৬ ব্যবহারকারী দেশগুলোতে রপ্তানি করা হতে পারে। তুরস্ক জানিয়েছে, এই বোমা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে ব্যবহার করা হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ‘গাজাপ’ শুধু একটি অস্ত্র নয়, বরং তুরস্কের বিকশিত প্রতিরক্ষা শক্তি ও স্বাধীন সামরিক নীতির প্রতীক। যুদ্ধক্ষেত্রের ভারসাম্য মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতার কারণে এটি ভবিষ্যতের আঞ্চলিক সংঘাতে তুরস্কের প্রধান কৌশলগত হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

Shera Lather
Link copied!