ইউক্রেন সংঘাতের কারণে মস্কোর সঙ্গে জ্বালানি ও বাণিজ্য সম্পর্ক হ্রাস করায় প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ১.১৫ ট্রিলিয়ন ডলার) বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মস্কো থেকে আমদানি কমায় আমেরিকার তুলনায় ইউরোপে গ্যাসের দাম ৪-৫ গুণ বেশি, আর বিদ্যুৎ ২-৩ গুণ বেশি।
সোমবার (৪ আগস্ট) ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার গ্রুশকো।
তিনি বলেন, রাশিয়ার ওপর ইইউর অভূতপূর্ব নিষেধাজ্ঞার অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মূল্যায়নের ভিত্তিতে এক পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এসব নিষেধাজ্ঞা জ্বালানি ও বাণিজ্য সহযোগিতা থেকে ইউরোপের লাভ হারানোর জন্য দায়ী।
রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার গ্রুশকো জানান, ইইউ ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০১৩ সালে যেখানে ছিল ৪১৭ বিলিয়ন ইউরো (৪৮২ বিলিয়ন ডলার), তা ২০২৩ সালে নেমে এসেছে মাত্র ৬০ বিলিয়ন ইউরো (৬৯ বিলিয়ন ডলার)-এ। তিনি বলেন, ‘এই বাণিজ্য এখন প্রায় শূন্যের কাছাকাছি’।
তার মতে, এই পরিস্থিতির কারণে ইউরোপের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এটি ধীরে ধীরে নিজের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা হারাচ্ছে।
রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়, মস্কোর সঙ্গে অর্থনৈতিক যোগাযোগ ছিন্ন করার কারণে ইউরোপকে বড় মূল্য দিতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন গ্রুশকো। তিনি বলেন, ‘ইউরোপে এখন প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম আমেরিকার তুলনায় ৪-৫ গুণ বেশি, আর বিদ্যুৎ ২-৩ গুণ বেশি। এই অতিরিক্ত ব্যয় রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ফল।’
গত জুন মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহ প্রত্যাখ্যান করার কারণে ইইউ দেশগুলোর ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ২৩১ বিলিয়ন ডলার)। রুশ কর্মকর্তাদের মতে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা-সম্পর্কিত ইইউর মোট ক্ষতি দাঁড়াতে পারে প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, মস্কো দাবি করেছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব মোকাবিলায় তারা এখন ‘কিছুটা অনাক্রম্যতা’ অর্জন করেছে।
গ্রুশকোর এই মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ইইউকে বিপুল পরিমাণ আমেরিকান জ্বালানি কিনতে হবে, যা রাশিয়ার তুলনায় অনেক ব্যয়বহুল। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র ইইউর প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
এই চুক্তিকে অনেক ইইউ রাজনীতিবিদ একতরফা এবং ইউরোপের স্বার্থের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছেন। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘এই চুক্তির মাধ্যমে ইইউ তাদের রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে, যার ফলে তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও খর্ব হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, ইউক্রেন সংকট শুরু হওয়ার পর ২০১৪ সাল থেকেই ইইউ ধাপে ধাপে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০২২ সালে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়। এসব নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার ব্যাংকিং, জ্বালানি রপ্তানি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাত।
মস্কোর মতে, এসব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিধি লঙ্ঘন করে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ণ করে।
আপনার মতামত লিখুন :