ঢাকা সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

এক্স-এর বিরুদ্ধে মুসলিম বিদ্বেষের গুরুতর অভিযোগ

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৫, ০৮:২৯ পিএম
ইলন মাস্ক ও এক্স। ছবি- সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের সাউথপোর্টে এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর মুসলিম ও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারণার অভিযোগ উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এর বিরুদ্ধে। ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্মটির অ্যালগরিদম ও নীতিমালাগুলো এ জন্য বড় ভূমিকা রেখেছে, যা উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

বুধবার (৬ আগস্ট) সংস্থাটির প্রকাশিত একটি নতুন বিশ্লেষণে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, কীভাবে প্ল্যাটফর্মটি ভুল তথ্য ও ঘৃণামূলক কনটেন্ট ছড়ানোর উপযোগী পরিবেশ তৈরি করেছে, যা পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যজুড়ে সহিংসতা বাড়াতে সহায়তা করেছে এবং এখনও গুরুতর মানবাধিকার ঝুঁকি তৈরি করে চলেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, গত গ্রীষ্মে সাউথপোর্টে তিন তরুণীকে নৃশংসভাবে হত্যার পর এক্স-এ মুসলিম ও অভিবাসীবিরোধী ভুল তথ্য, ঘৃণাপূর্ণ কনটেন্ট এবং উসকানিমূলক বক্তব্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এতে যুক্তরাজ্যে ওই সময় ঘটে যাওয়া মুসলিম ও অভিবাসীদের লক্ষ্য করে সহিংসতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে প্ল্যাটফর্মটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এক্স-এর অ্যালগরিদমিক সুপারিশ ব্যবস্থা, যেটি কনটেন্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়, সেটি ঘৃণা, উত্তেজনা এবং প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এমন পোস্টকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেয়। এসব পোস্ট যদি ব্যবহারকারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ায়, তাহলে তা প্রচারে আরও উৎসাহ পায়, যা ঝুঁকিপূর্ণ কনটেন্টকে প্রশমিত করার মতো পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি করে।

অ্যামনেস্টির ‘বিগ টেক অ্যাকাউন্টেবিলিটি’ বিষয়ক প্রধান প্যাট ডি ব্রুন বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছর যুক্তরাজ্যে মুসলিম ও অভিবাসীবিরোধী সহিংসতার যে ঢেউ উঠেছিল, সেখানে এক্স-এর নীতিগত ও প্রযুক্তিগত কাঠামো এসব ঝুঁকি বাড়াতে সাহায্য করেছিল। আজও এটি গুরুতর মানবাধিকার হুমকি হয়ে রয়েছে।’

২০২৩ সালের ২৯ জুলাই সাউথপোর্টে অ্যাক্সেল রুদাকুবানাকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটে। এরপর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে ডানপন্থি উগ্রবাদীরা দাঙ্গা ও সহিংসতা শুরু করে। হামলার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তি মুসলিম আশ্রয়প্রার্থী বলে মিথ্যা দাবি ছড়ানো হয় এক্সসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। ফলে দেশজুড়ে বহু মসজিদ, ইসলামিক সেন্টার ও অভিবাসী আশ্রয়কেন্দ্রে হামলা হয়।

গবেষণায় বলা হয়, ‘এক্স-এর নকশাগত বৈশিষ্ট্যগুলো এই ধরনের উত্তেজক বর্ণবাদী আখ্যানকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।’

‘ইউরোপ ইনভেশন’ নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট, যেটি পরিচিত অভিবাসীবিরোধী ও ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্যের জন্য, হামলার খবর ছড়ানোর পরপরই পোস্ট করে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন ‘মুসলিম অভিবাসী’। এই পোস্টটি ৪ মিলিয়নের বেশি বার দেখা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক্স-এ মুসলিম, শরণার্থী, বিদেশি বা নৌকায় আসা অভিবাসীদের দায়ী করে দেওয়া পোস্টগুলো মিলিয়ে প্রায় ২৭ মিলিয়ন ইমপ্রেশন হয়।

অ্যামনেস্টি জানায়, এক্স-এর অ্যালগরিদম তখন পর্যন্ত ওইসব কনটেন্টের ক্ষতির সম্ভাবনা মূল্যায়ন করে না, যতক্ষণ না উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যবহারকারী তা রিপোর্ট করে। অর্থাৎ কনটেন্ট যত বেশি আলোচনার জন্ম দেয়, তত বেশি তা ছড়ানোর সুযোগ পায়, এমনকি সেটি ক্ষতিকর হলেও।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসব ঘটনা ঘটেছে এক্স-এর বড় ধরনের নীতি ও কর্মী পুনর্গঠনের সময়। ২০২২ সালের শেষ দিকে যখন ইলন মাস্ক কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণ নেন, তখন থেকে এক্স কনটেন্ট মডারেশন টিমের কর্মীদের ছাঁটাই করে, আগের নিষিদ্ধ অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু করে, ট্রাস্ট ও সেফটি অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল বিলুপ্ত করে এবং ট্রাস্ট ও সেফটি ইঞ্জিনিয়ারদের ছাঁটাই করে।

ঘৃণা ও হয়রানির কারণে নিষিদ্ধ হওয়া বহু অ্যাকাউন্ট—যেমন অতি-ডানপন্থী ব্যক্তি স্টিফেন ইয়াক্সলি-লেনন। টমি রবিনসন নামে পরিচিত এই ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু করা হয়, যা সহিংসতামূলক ও ঘৃণাপূর্ণ বক্তব্য ছড়ানোর ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের গবেষণায় এ ধরনের প্রযুক্তিগত অব্যবস্থাপনা ও নীতিগত ঢিলেঢালা মনোভাবকে মানবাধিকার হুমকির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং দ্রুত ও কার্যকর নীতিমালা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।

তথ্য সূত্র: আনাদোলু