প্রেমিকার মন জয়ের জন্য চাঁদের পাথর চুরি করেছিলেন সাবেক নাসা ইন্টার্ন থাড রবার্টস। ২০০২ সালে তিনি ও তার সহযোগীরা নাসার সুরক্ষা ক্যামেরা অকার্যকর করে, নিওপ্রিন বডিস্যুট পরে এবং ভুয়া আইডি ব্যবহার করে ১৭ পাউন্ড ওজনের চাঁদের পাথর চুরি করেন। এসব পাথরের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ২১ মিলিয়ন ডলার। সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে এই চুরিকাণ্ডের বিস্তারিত।
কেন করেছিলেন এই চুরি?
২০০৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রবার্টস বলেন, তিনি প্রেমিকার জন্যই এই কাজ করেছিলেন। তার ভাষায়, ‘আমি প্রেমে পড়েছিলাম টিফানির। মনে হয়েছিল—আমি তাকে চাঁদ উপহার দেব। এটা হবে আমাদের সম্পর্কের রোমান্টিক শুরু।’
২০১২ সালে সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে তিনি বলেন, ‘সোজা কথায় বললে, আমি এটা করেছি ভালোবাসার জন্য। আমি চেয়েছিলাম প্রমাণ করতে যে, আমি সত্যিই এতটা পরোয়া করি।’
তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জানায়, এটি আর্থিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপরাধ। কারণ রবার্টস বেলজিয়ামের এক ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, যিনি চাঁদের পাথরের প্রতি গ্রামের জন্য ১ হাজার থেকে ৫ হাজার ডলার দিতে রাজি ছিলেন। তবে সন্দেহ হওয়ায় ওই ক্রেতা এফবিআইকে জানালে গোপন অভিযানে রবার্টসদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বিছানার চাদরের নিচে রেখেছিলেন চাঁদের পাথর
চাঁদের পাথর বিক্রির আগের দিন রবার্টস তার বিছানার চাদরের নিচে কিছু পাথর রেখে প্রেমিকা টিফানি ফাউলারের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। পরে তিনি বলেন, ‘তখন সেটা আরামের জন্য ছিল না, বরং ছিল প্রতীকী কিছু। পৃথিবীতে আর কেউ তো চাঁদে এমন কিছু করেনি।’
চুরির পুরো গল্প
২৪ বছর বয়সে নাসায় যোগ দেন থাড রবার্টস। পদার্থবিদ্যা, ভূতত্ত্ব ও ভূ-পদার্থবিদ্যায় তার ডিগ্রি ছিল। সেখানেই তার পরিচয় হয় ২২ বছরের টিফানি ফাউলারের সঙ্গে। তারা দুজন পরে আরেক ইন্টার্ন শে সাউরকে সঙ্গে নিয়ে পাথর চুরির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন।
তাদের সঙ্গে ছিলেন গর্ডন ম্যাকহোয়ার্টার, যিনি ক্রেতা খুঁজে দেন
পরে এফবিআই অভিযান চালিয়ে সবাইকে গ্রেপ্তার করে। চুরি হওয়া পাথর উদ্ধার করা হলেও এফবিআই জানায়, এগুলো বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য প্রায় ‘অকার্যকর’ হয়ে গেছে।
শাস্তি ও পরিণতি
২০০২ সালে রবার্টস দোষ স্বীকার করেন এবং তাকে ৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে ২০০৮ সালে ছয় বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি মুক্তি পান। ফাউলার ও সাউরকে ১৫০ ঘণ্টা কমিউনিটি সার্ভিস, ১৮০ দিনের গৃহবন্দি ও ৯ হাজার ডলারের বেশি ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। ম্যাকহোয়ার্টার আদালতে দোষী প্রমাণিত হন এবং ছয় বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।
প্রেমের সমাপ্তি ও রবার্টসের বর্তমান অবস্থান
গ্রেপ্তার ও কারাদণ্ডের পর রবার্টস ও ফাউলার আর কখনো একে অপরের সঙ্গে দেখা করেননি। জেলে থাকাকালীন রবার্টস সময় কাটিয়েছেন পড়াশোনা, ব্যায়াম, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের রহস্য নিয়ে গবেষণা এবং লেখালেখির মাধ্যমে। সেখানেই তিনি তার ‘আইনস্টানস ইন্টিউশন’ বইটির জন্য ৭০০ পাতার পাণ্ডুলিপি লেখেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি থিঙ্ক ট্যাঙ্কে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ হিসেবে কাজ করছেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন