বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৫, ০৪:৫৩ পিএম

গুজরাটের স্কুলে বোরকা পরা ছাত্রীদের ‘সন্ত্রাসী’ রূপে দেখানোয় বিতর্ক

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৫, ০৪:৫৩ পিএম

ভাবনগরের ওই স্কুলের অনুষ্ঠানের যে নাটক ঘিরে বিতর্ক। ছবি- সংগৃহীত

ভাবনগরের ওই স্কুলের অনুষ্ঠানের যে নাটক ঘিরে বিতর্ক। ছবি- সংগৃহীত

ভারতের গুজরাটের ভাবনগরের একটি স্কুলে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোরকা পরিহিত ছাত্রীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে উপস্থাপন করায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এবং প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও জমা পড়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, কালো বোরকা পরিহিত কয়েকজন ছাত্রী খেলনা বন্দুক হাতে অন্য ছাত্রীর দিকে গুলি চালানোর ভঙ্গি করছে। প্রায় পাঁচ মিনিট দীর্ঘ ওই ভিডিওতে জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার প্রসঙ্গও উঠে আসে। পটভূমিতে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশাত্মবোধক গান বাজতে শোনা যায়। এই উপস্থাপনার দৃশ্য অনেকের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছে এবং সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিবিসির গুজরাটি বিভাগের সহযোগী সাংবাদিক অল্পেশ দাভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিও ঘিরে নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজন নেতা জেলা শাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ সচেতনভাবেই মুসলমানদের সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অভিযোগকারীদের মতে, ভাবনগর শহরের কুম্ভরওয়াড়া এলাকায় অবস্থিত পৌরসভা পরিচালিত একটি স্কুলে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নাটকটি মঞ্চস্থ করা হয়। সেখানে সাদা পোশাক ও গেরুয়া ওড়না পরা ছাত্রীদের লক্ষ্য করে ‘সন্ত্রাসী’ সাজা ছাত্রীদের হামলা চালাতে দেখা যায়। অভিযোগ করা হয়, যে ছাত্রীদের সন্ত্রাসী চরিত্রে দেখানো হয়েছে, তাদের বোরকা পরানো হয়েছিল। ফলে মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকের কাছে বিষয়টি ধর্মীয় পরিচয়কে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের সামিল মনে হয়েছে।

মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা জহুরভাই জেজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘পৌরসভা পরিচালিত এই স্কুলে একটি নাটক উপস্থাপন করা হয়েছিল, যেখানে পর্যটক ও সেনাবাহিনীর ভূমিকাও দেখানো হয়। কিন্তু সেই নাটকে নির্দোষ ছাত্রীদের বোরকা পরিয়ে সন্ত্রাসীর চরিত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে। এভাবে মুসলমানদের সন্ত্রাসী হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

তিনি স্কুলের প্রিন্সিপালসহ শিক্ষকদের দায়ী করে আরও বলেন, ‘নিষ্পাপ শিশুদের দিয়ে এ ধরনের কাজ করানো মানে দেশকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা। মুসলমানদের বদনাম করার জন্য যেভাবে বোরকার ব্যবহার করা হয়েছে, আমরা তার তীব্র বিরোধিতা করছি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবিলম্বে বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া এসেছে। স্কুলের প্রিন্সিপাল রাজেন্দ্র কুমার দাভে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, “এটি একটি বালিকা বিদ্যালয়। আমরা প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করি। এ বছর ‘অপারেশন সিন্দুর’ শীর্ষক নাটক উপস্থাপন করা হয়েছিল।’

স্কুলের প্রিন্সিপাল রাজেন্দ্র কুমার দাবে।

তিনি আরও বলেন, ‘শিশুদের পোশাকে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে এবং তা নিয়ে কোনো সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত লেগে থাকে, তবে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। আমাদের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র অপারেশন সিন্দুর-এর সাফল্যের বিষয়ে শিশু ও অভিভাবকদের অবহিত করা ছিল, কোনোভাবেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা নয়।”

এ বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তারাও মন্তব্য করেছেন। ভাবনগর প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির এডুকেশন অফিসার মুঞ্জল বডমিয়া বিবিসিকে জানান, ‘১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শহরের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন উপস্থাপনা করেছে। তবে এই ঘটনার বিষয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। ইতোমধ্যে স্কুলের প্রিন্সিপালকে নোটিস পাঠানো হয়েছে এবং তার কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই স্থানীয়ভাবে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। কেউ কেউ এটিকে কেবল ভুল পোশাক নির্বাচনের কারণে সৃষ্টি হওয়া ভুল বোঝাবুঝি হিসেবে দেখছেন। আবার অনেকে বলছেন, এটি মুসলিম সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে। তবে ঘটনাটি যে নতুন করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই একমত।

Link copied!