ইরানে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দেশটির বিচার বিভাগের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়া। মাত্র দুই দিন আগে দেশটিতে আরেকজনকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে টানা দুটি এমন শাস্তি কার্যকরের ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আল আরাবিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ড কারাগারের ভেতরেই কার্যকর করা হয়। তবে কোনো অপরাধ বিশেষ ক্ষোভের সৃষ্টি করলে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়ে থাকে। এবারের ঘটনাও সেই ব্যতিক্রম নয়।
প্রাদেশিক বিচার বিভাগের প্রধান হাইদার আসিয়াবি স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, কর্দকুই শহরে অপরাধ সংঘটিত হওয়া স্থানেই আজ ভোরে প্রকাশ্যে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বিচার বিভাগের ওয়েবসাইট মিজান অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দোষী ব্যক্তিকে গত বছরের শেষের দিকে এক দম্পতি ও এক তরুণীকে শিকারের রাইফেল দিয়ে হত্যা করার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। রায় কার্যকর করার সময় ঘটনাস্থলেই স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, মঙ্গলবার দক্ষিণাঞ্চলীয় ফারস প্রদেশে আরেকজন দোষীকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়। তিনি ডাকাতির সময় এক মা ও তার তিন সন্তানকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। একই মামলায় তার স্ত্রীকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে তার শাস্তি কারাগারের ভেতরে কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ধরনের প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, চীন ছাড়া বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় ইরানেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর দাবি, প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের পরিপন্থী এবং এটি জনগণের মধ্যে ভয় সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।
তবে ইরানের আইন অনুযায়ী খুন, ধর্ষণ, ব্যভিচার এবং কিছু মাদক-সংক্রান্ত অপরাধ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধের তালিকায় রয়েছে। দেশটির বিচার বিভাগ বরাবরই বলছে, কঠোর শাস্তি অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ইরানি কর্তৃপক্ষ মনে করে, প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে সমাজে অপরাধের বিরুদ্ধে একটি ‘সতর্কবার্তা’ দেওয়া সম্ভব হয়।
সাম্প্রতিক দুটি ঘটনায় ইরানের অভ্যন্তরে আলোচনার ঝড় উঠেছে। একদিকে অনেকেই মনে করছেন, এই কঠোর পদক্ষেপ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে। অন্যদিকে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এর মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন এরই মধ্যে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার জন্য। তাদের মতে, মৃত্যুদণ্ড কখনোই অপরাধ দমন করতে সক্ষম হয়নি, বরং মানবাধিকারের মৌলিক লঙ্ঘন হিসেবেই এটি চিহ্নিত।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকাশ্যে দুই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার ঘটনায় ইরান আবারও বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। দেশটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা এবং এর প্রকাশ্য পদ্ধতির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে রয়েছে। তবে তেহরান এখনো দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে যে কঠোর শাস্তিই সমাজকে অপরাধমুক্ত করার সর্বোত্তম উপায়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন