ইউরোপ থেকে আমদানিকৃত ওষুধ, কাঠ ও সেমিকন্ডাক্টরের ওপর শুল্ক সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশে সীমিত থাকার চুক্তিতে সম্মত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ফলে বিমান ও যন্ত্রাংশ, জেনেরিক ওষুধ এবং রাসায়নিক পণ্যের ওপর শুল্কারোপের কড়া পদক্ষেপ থেকে সরে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিসি নিউজ।
নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ইউরোপ থেকে আমদানি করা ওষুধ, কাঠ ও সেমিকন্ডাক্টরের শুল্ক সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশে সীমিত থাকবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুদিন আগেই এসব খাতে ২৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছিলেন। সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে আটলান্টিক দুই পারে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হতো বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সমঝোতায় পৌঁছানোয় আপাতত সেই সংকট কাটল।
ট্রাম্প প্রশাসন গত কয়েক বছরে একের পর এক শুল্ক বাড়িয়েছে। এতে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন। তবে হোয়াইট হাউস দাবি করে আসছে, এসব শুল্ক থেকে বিপুল রাজস্ব অর্জন করছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন বলেছেন, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও ইইউ তার শিল্প ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থ রক্ষা করেছে। তিনি মনে করিয়ে দেন, শুল্ক সরাসরি কোম্পানিগুলো দেয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোক্তারাই এর ভার বহন করে। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ওপর শুল্কের চাপ পড়ছে, ইউরোপ নয়।
চুক্তি অনুযায়ী, কর্ক, বিমান ও যন্ত্রাংশ, জেনেরিক ওষুধ এবং রাসায়নিক পণ্যের শুল্ক আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আগের স্তরে নামিয়ে আনা হবে। ইউরোপীয় বাণিজ্য কমিশনার মারোস শেফকোভিচ বলেছেন, এটি প্রথম ধাপ মাত্র, ভবিষ্যতে আরও ছাড় আসতে পারে। তবে ওয়াইন ও স্পিরিট শিল্প এবার কোনো ছাড় পায়নি।
অন্যদিকে, মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক দাবি করেছেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রধান অংশীদারের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করেছে। তার ভাষায়, এই সমঝোতা মার্কিন শ্রমিক, শিল্প এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় সাফল্য। যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা আয়ারল্যান্ড এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন বলেছেন, ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টর খাতের জন্য ১৫ শতাংশ সীমা আয়ারল্যান্ডের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল।
চুক্তির অংশ হিসেবে ইইউ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি এবং অন্তত ৪০ বিলিয়ন ডলারের এআই চিপ কিনবে। পাশাপাশি ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত খাতে অতিরিক্ত ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। ট্রাম্প বলেছেন, এই প্রতিশ্রুতি দৃঢ় অঙ্গীকার, যদিও যৌথ নথিতে এগুলোকে আগামী তিন বছরের লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ট্রাম্প স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলে সঙ্গে সঙ্গেই শুল্ক বাড়ানো হবে। নতুন সমঝোতা অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পারস্পরিক শুল্ক ১৫ শতাংশে সীমিত থাকবে, যা ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। গাড়ির শুল্কও কমানো হবে, তবে শর্ত হলো ইউরোপীয় সংসদ দ্রুত শিল্প শুল্ক হ্রাসের আইন পাশ করবে। এ ছাড়া, উভয় পক্ষ তৃতীয় দেশের আরোপিত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানি বিধিনিষেধ মোকাবিলায় সহযোগিতা এবং ডিজিটাল বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে একসঙ্গে কাজ করবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন