যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ডেসারেট নিউজ-এ নিবন্ধ লিখেছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে তিনি গত বছরের গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ, প্রশাসনিক সংস্কার এবং দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ বিবরণ দিয়েছেন।
নিবন্ধে ড. ইউনূস বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি রাষ্ট্রের কোনো নির্বাচিত বা নিযুক্ত পদে থাকবেন না। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত করেছি, নির্বাচনের পর যে সরকার গঠন হবে, সেখানে আমি কোনো দায়িত্বে থাকব না।’
এর মাধ্যমে তিনি নিজের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করেছেন।
ড. ইউনূস জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা। এই নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ভোটারদের কাছে সমস্ত পরিকল্পনা ও প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারবে।
এ ছাড়া দেশের প্রবাসী নাগরিকদেরও ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, এটি একটি বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা সম্পন্ন করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
ড. ইউনূস তার নিবন্ধে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান এবং ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের ঘটনা নিয়ে লিখেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সেই সময়ে ছাত্র ও যুব সমাজের সহায়তায় দেশের ইতিহাসের একটি অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটানো সম্ভব হয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পর যে ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেই শূন্যতা পূরণ করতে ছাত্রনেতারা তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন।
তিনি বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমি রাজি হইনি। কিন্তু যখন তরুণদের জীবন উৎসর্গের কথা ভাবলাম, তখন তাদের ফিরিয়ে দিতে পারিনি। ৮ আগস্ট ২০২৪ সালে সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের নেতৃত্ব গ্রহণ করি। আমাদের কাজ ছিল দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থ উদ্ধার করা।’
ড. ইউনূস উল্লেখ করেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় দেশের প্রশাসন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অর্থনীতি পুনরায় সুসংহত করা হয়েছে। পুলিশের পেশাদারিত্ব বজায় রাখা, রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয় এবং সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগিতার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার ছিল গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের লুটপাট করা অর্থ উদ্ধার করা।
ড. ইউনূস আরও লিখেছেন, সংখ্যানুপাতিক ভোট প্রক্রিয়া এবং সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যতকে স্বৈরাচার থেকে রক্ষা করা হবে। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে দেশের সকল নাগরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে। এই অর্জন সম্ভব হয়েছে দেশের জনগণের সাহস, কল্পনা ও দৃঢ়তার কারণে।’
নিবন্ধে ড. ইউনূস পররাষ্ট্রনীতি, বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়েও উল্লেখ করেছেন। তিনি বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘের সহায়তাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন।
ডেসারেট নিউজে প্রকাশিত নিবন্ধের মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করেছেন, তিনি নির্বাচনের পর কোনো পদে থাকবেন না এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য ছিল সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দেশের সব যোগ্য নাগরিক ভোটাধিকারে অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং গণতন্ত্রের অগ্রগতিতে সরকারের কাজ অব্যাহত থাকবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন