লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম ঘোষণা করেছে, জীবাশ্মবিদরা ডাইনোসরের নতুন এক প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো পিঠে থাকা পালের মতো কাঠামো। ডাইনোসরটির নাম রাখা হয়েছে রেকর্ডধারী ব্রিটিশ নাবিক এলেন ম্যাকআর্থারের সম্মানে ‘ইস্তিওরাকিস ম্যাকআর্থুরি’।
ডাইনোসরটির হাড় ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলের একটি ছোট দ্বীপ আইল অফ ওয়াইট-এ আবিষ্কৃত হয়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি ১২ কোটি বছরেরও বেশি সময় আগে অন্যান্য ইগুয়ানডন আত্মীয়দের সঙ্গে সেখানে বিচরণ করত। ইগুয়ানডনরা ছিল তৃণভোজী ডাইনোসরের একটি দল, যারা জুরাসিক যুগের শেষভাগ থেকে ক্রিটেসিয়াস যুগ পর্যন্ত পৃথিবীতে বাস করত।
প্রায় ৪০ বছর আগে আবিষ্কৃত এই নমুনাটিকে পূর্বে আইল অফ ওয়াইটে বসবাসকারী দুটি পরিচিত ইগুয়ানোডন্টিয়ান প্রজাতির একটি বলে মনে করা হতো। কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক জেরেমি লকউড তার পিএইচডি গবেষণার অংশ হিসেবে হাড়গুলো পুনরায় পরীক্ষা করার সময় একটি অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেন।
তিনি বুঝতে পারেন, এই ডাইনোসরের বিশেষভাবে দীর্ঘ স্নায়ু কাঁটা ছিল, যা খুবই বিরল। এই স্বতন্ত্র পালের মতো গঠনই ডাইনোসরটিকে একটি নতুন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে সাহায্য করেছে। লকউড তার গবেষণার ফলাফল 'পেপারস ইন প্যালিওন্টোলজি' জার্নালে প্রকাশ করেছেন।
এই বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ডাইনোসরটিকে নতুন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় দুই মিটার এবং ওজন প্রায় এক হাজার কিলোগ্রাম। লকউডের গবেষণা বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) পেপারস ইন প্যালিওন্টোলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
গবেষণা অনুসারে, ডাইনোসরটি প্রায় ২ মিটার লম্বা এবং এর ওজন ছিল প্রায় এক হাজার কেজি। লকউড বলেন, ‘আইল অব ওয়াইট থেকে আরেকটি ইগুয়ানোডন্টিয়ানের আবিষ্কার প্রমাণ করে যে, ক্রিটেসিয়াস যুগের প্রথম দিকে এটি একটি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় অঞ্চল ছিল। আমি নিশ্চিত, আগামী বছরগুলোতে আরও অনেক নতুন আবিষ্কার হবে।’
বিজ্ঞানীরা এর পিঠের অতিরঞ্জিত পালের মতো কাঠামোর কারণ নিয়ে নিশ্চিত নন। তবে তারা অনুমান করছেন যে এটি সঙ্গীকে আকর্ষণ করতে এবং একই প্রজাতির সদস্যদের চিনতে সাহায্য করত।
লকউড ব্যাখ্যা করেন যে, ইস্তিওরাকিস ম্যাকআর্থুরি এমন এক সময়ে বাস করত যখন ইগুয়ানডন ডাইনোসরদের মেরুদণ্ড পেশী সংযুক্তির জন্য লম্বা হচ্ছিল। কারণ তারা ছোট, দ্বিপদী প্রাণী থেকে বড় চতুর্পদী প্রাণীতে রূপান্তরিত হচ্ছিল, যার জন্য মেরুদণ্ডে শক্তিশালী পেশীবহুল সমর্থনের প্রয়োজন ছিল।
তবে এই বিবর্তনের প্রেক্ষাপটেও ইস্তিওরাকিস ম্যাকআর্থুরের মেরুদণ্ড ছিল অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘ। লকউড একটি প্রচলিত তত্ত্বের বিরোধিতা করেন, যেখানে বলা হয়, এই পাল শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করত। তিনি যুক্তি দেন, প্রচুর রক্তনালীযুক্ত একটি পাল আক্রমণের সময় খুব ঝুঁকিপূর্ণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হতে পারত।
পরিবর্তে তিনি বিশ্বাস করেন, এর সবচেয়ে সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো ‘যৌন সংকেত’, যা অনেকটা পুরুষ ময়ূরের লেজের মতো কাজ করত। তার মতে, যখন কোনো প্রাণীর মধ্যে কোনো বৈশিষ্ট্য তার ব্যবহারিক কার্যকারিতার চেয়ে বেশি অতিরঞ্জিত হয়, তখন সেটি সঙ্গীকে আকর্ষণ করার বিবর্তনীয় চাপের কারণেই ঘটে থাকে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন