ক্রমবর্ধমান জনস্বাস্থ্য সংকটের মুখোমুখি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ। কারণ মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর পাশাপাশি আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়ছে চিকুনগুনিয়া। হাসপাতালাগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও বড় আকারের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশে ৩৩ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এবং মৃত্যু হয়েছে ১৩২ জনের। শুধু সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় দেড় হাজার রোগী নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
অনেক বছর পর চিকুনগুনিয়া আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ঢাকাভিত্তিক চারটি ল্যাবে ৭৮৫টি কেস নিশ্চিত করা হয়েছে, যেখানে কিছু ল্যাবে শক্তকরণের হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ৩০টি কেস রিপোর্ট হয়েছে এবং চলতি বছর শহরটির মোট কেস প্রায় তিন হাজারে পৌঁছেছে।
হাসপাতালগুলো রোগীদের ভিড়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো উপচে পড়ছে, যেখানে রোগীর সংখ্যা তিন গুণেরও বেশি। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযান জোরদার না করলে সংকট আরও গভীর হতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেছেন, ‘এডিস মশা আমাদের শহরগুলোতে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। নির্মাণস্থল, ছাদ, ফুলের টব—এসব জায়গায় জমে থাকা পানি প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে। যদি আমরা এই আবাসস্থলগুলো পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস না করি, তাহলে ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া প্রতি বছর আরও বড় আকার ধারণ করবে।’
২০২৩ সাল ছিল রেকর্ড সৃষ্টিকারী, যেখানে ডেঙ্গুতে ১ হাজার ৭০৫ জন মারা যান এবং ৩ লাখ ২১ হাজারে বেশি সংক্রমণ ঘটেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (এইচডব্লিউও) ডেঙ্গুকে একটি দ্রুত বর্ধনশীল বৈশ্বিক হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন এবং শহুরে জনাকীর্ণতার কারণে আরও খারাপ হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগীদের দ্রুত সতর্কতার লক্ষণগুলো চিহ্নিত করার পরামর্শ দিয়েছে, যেমন পেটে ব্যথা, বমি, রক্তপাত, অথবা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং ভাইরাল জ্বরে এনএসএআইডি বা স্টেরয়েডের অপব্যবহার থেকে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
রোগীরা জানিয়েছেন, আগের জ্বরের মরশুমের অভিজ্ঞতা থেকে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। দুই সপ্তাহ ধরে শয্যাশায়ী সুলতানা পারভীন (৪৮) বলেন, ‘আমার ডেঙ্গু পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ ছিল, কিন্তু ব্যথা রয়ে গেছে। ঠিকমতো হাঁটতে পারি না কারণ আমার গোড়ালিতে খুব ব্যথা হয়।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসঙ্গে একাধিক জ্বর ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাংলাদেশে এখন জরুরি ভিত্তিতে শক্তিশালী হাসপাতাল ব্যবস্থা, বর্ধিত পরীক্ষার সুযোগ এবং বছরব্যাপী মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযানের প্রয়োজন।