সাম্প্রতিক একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কারের যোগ্য মনে করেন না অধিকাংশ আমেরিকান নাগরিক। ওয়াশিংটন পোস্ট ও ইপসোসের যৌথভাবে পরিচালিত এক জরিপে দেখেছে- অংশগ্রহণকারী ২,৫১৩ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ৭৬ শতাংশ বলেছেন, ট্রাম্প এই পুরস্কারের যোগ্য নন। মাত্র ২২ শতাংশ উত্তরদাতা তার পক্ষে মত দিয়েছেন।
এই তথ্য ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের দাবি ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একটি স্পষ্ট দ্বন্দ্ব তুলে ধরে। ট্রাম্প বহুবার দাবি করেছেন, তার শাসনামলে তিনি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংঘাতের অবসান ঘটিয়েছেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার উপযুক্ত।
জাতিসংঘে দেওয়া সাম্প্রতিক এক ভাষণে তিনি দাবি করেন, তিনি সাতটি আন্তর্জাতিক সংঘাতের সমাপ্তি টেনেছেন। তবে সিএনএন-এর একটি ফ্যাক্ট-চেক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, এই দাবিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ভিত্তিহীন। কেননা ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন মিশর এবং ইথিওপিয়ার মধ্যে তার সময়ে কোনো যুদ্ধই হয়নি।
জরিপে ট্রাম্পের প্রতি জনসমর্থনের ঘাটতিও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বর্তমানে তার নেট জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। একাধিক জরিপে দেখা গেছে, তার সমর্থনের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
পোস্ট-ইপসোসের জরিপে ৪৩ শতাংশ তার কর্মক্ষমতাকে সমর্থন করেছেন, যেখানে ৫৬ শতাংশ বিরূপ মতামত দিয়েছেন। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংঘাত নিয়ে তার অবস্থানের বিষয়ে যথাক্রমে ৬০ ও ৫৮ শতাংশ নাগরিক নেতিবাচক মূল্যায়ন করেছেন।
ট্রাম্পের নোবেল প্রাপ্তির দাবির বিষয়ে রাজনৈতিক বিভক্তিও স্পষ্ট। রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ মনে করেন তিনি এই পুরস্কারের যোগ্য, আবার ঠিক একই হারে অন্যরা এর বিরোধিতা করেছেন। স্বাধীন রাজনৈতিক মতাবলম্বীদের মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ এবং ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ ট্রাম্পের পক্ষে মত দিয়েছেন।
তবে শুধু ট্রাম্প নন, অতীতে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ক্ষেত্রেও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। জরিপে ৫৪ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, ওবামাও ২০০৯ সালে এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না। এটি বোঝায়, নোবেল শান্তি পুরস্কারের গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে স্পষ্ট সংশয় রয়েছে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, সার্বিয়া-কসোভো, কঙ্গো-রুয়ান্ডা, মিশর-ইথিওপিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে শান্তি আনয়নে তার প্রশাসনের ভূমিকা ছিল। যদিও এই দাবিগুলোর বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পায়নি। তাছাড়া, নোবেল পুরস্কারের কমিটির একাধিক সদস্য অতীতে ট্রাম্পের গণতন্ত্রবিরোধী অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন, যা তার পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনাকে আরও ক্ষীণ করে তোলে।
এছাড়া, ট্রাম্পের অভিযোগ যে তাকে রাজনৈতিক কারণে নোবেল দেওয়া হবে না, সেটি নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির নিরপেক্ষতার প্রশ্নও সামনে আনে। ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি যাই করি না কেন, আমি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাব না, কিন্তু জনগণ জানে, এবং এটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
উল্লেখ, ট্রাম্পকে বেশ কয়েকবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। ২০২৩ সালে, নিউইয়র্কের রিপাবলিকান প্রতিনিধি ক্লডিয়া টেনি তাকে মনোনীত করেন তার ‘ঐতিহাসিক’ মধ্যপ্রাচ্য নীতির জন্য। এর আগে, ২০২০ সালে উগ্র ডানপন্থি নরওয়েজিয়ান রাজনীতিবিদ ক্রিশ্চিয়ান টাইব্রিং-জেদে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে পুনর্মিলনের প্রচেষ্টার জন্য ট্রাম্পকে মনোনীত করেন। একই বছর, সুইডিশ এমপি ম্যাগনাস জ্যাকবসন সার্বিয়া ও কসোভোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করার জন্য তাকে মনোনীত করেন।