ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কখনো পারমাণবিক বোমা না বানানোর প্রতিশ্রুতি ইরানের

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৯:৩১ এএম
জাতিসংঘে ভাষণ দিচ্ছেন মাসুদ পেজেশকিয়ান। ছবি- সংগৃহীত

তেহরান কখনোই পারমাণবিক বোমা বানাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। বুধবার (২৪ সেপ্টম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে বিশ্বনেতাদের সামনে এ ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর ভণ্ডামির অভিযোগ তুলে ইসরায়েলের ‘গ্রেটার ইসরায়েল’পরিকল্পনা ও সাম্প্রতিক আগ্রাসনের তীব্র সমালোচনা করেন পেজেশকিয়ান।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, তেহরান কখনোই পারমাণবিক বোমা তৈরি করবে না বলে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। বুধবারের এই বক্তব্য এসেছে এমন সময়ে, যখন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির (ই-থ্রি) উদ্যোগে শুরু হওয়া ৩০ দিনের প্রক্রিয়া ২৭ সেপ্টেম্বর শেষ হতে যাচ্ছে।এই তিন দেশের অভিযোগ, তেহরান ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

ই-থ্রি জানিয়েছে, ইরান যদি জাতিসংঘ পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার পুনঃস্থাপন করে, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত নিয়ে উদ্বেগ দূর করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়, তবে ছয় মাস পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ জাতিসংঘে পেজেশকিয়ানের সঙ্গে বৈঠকের পর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ লিখেছেন, ‘চুক্তি এখনও সম্ভব। মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। ইরানের এখন আমাদের উত্থাপিত যৌক্তিক উদ্বেগগুলোর জবাব দেওয়া দরকার।’

ইরান এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে সরে যাওয়া এবং এর পর দেশটির ওপর বিমান হামলাকে দায়ী করে জানিয়েছিল, এসব কারণেই তারা আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করা কমিয়েছে।

ভাষণে পেজেশকিয়ান ইউরোপীয়রা ভণ্ডামি করছে অভিযোগ করে বলেন, ‘তারা নিজেদের সৎ পক্ষ হিসেবে দেখালেও বাস্তবে আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে ছোট করে দেখিয়েছে। তারা আসলে যুক্তরাষ্ট্রের ইশারায় কাজ করছে।’

পেজেশকিয়ান আরও বলেন, ইউরোপীয়রা আইনি বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে গেছে এবং ইরানের আইনসঙ্গত পদক্ষেপগুলোকে ভ্রান্তভাবে ‘চুক্তি ভঙ্গ’হিসেবে উপস্থাপন করেছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার দেওয়া ভাষণে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি আবারও বলেছেন, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চাইছে না। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করেছেন। মূলত নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে ইরানের বিদেশি সম্পদ জব্দ হবে, অস্ত্র চুক্তি বন্ধ হয়ে যাবে এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও কঠোরভাবে সীমিত করা হবে।

বুধবারের ভাষণে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার নিন্দা করেন, যা ১২ দিনের যুদ্ধের সূচনা করেছিল। এতে ইরানের বহু জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন এবং দেশটির প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে। তিনি জানান, ইসরায়েলের বিমান হামলায় এক হাজারের বেশি ইরানি নিহত হয়েছেন এবং দেশটির সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা হয়েছে।

ইসরায়েলকে প্রতিবেশী লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও কাতারসহ একাধিক দেশে হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ইরানে হামলাটি ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান। পেজেশকিয়ান বলেন, ‘দেশপ্রেমিক ও সাহসী ইরানি জনগণ দেখিয়ে দিয়েছে, আগ্রাসনের সামনে কখনোই মাথা নত করবে না।’

জাতিসংঘ অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই এবং সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন নেতা আহমেদ আল-শারা বক্তব্য রাখেন। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ।

পেজেশকিয়ান বলেন, ইসরায়েল প্রকাশ্যে ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ পরিকল্পনার কথা বলছে, যা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে ‘বাফার জোন’তৈরির কৌশল।

পেজেশকিয়ানের অভিযোগ, ‘প্রায় দুই বছরের গণহত্যা, গণ-অনাহার, দখলকৃত ভূখণ্ডে বর্ণবৈষম্য এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরুদ্ধে আগ্রাসনের পরও ইসরায়েল এখনো এই অবাস্তব ও দুঃসাহসী পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে।’

ইরানি প্রেসিডেন্ট বলেন, ইসরায়েল আর কেবল স্বাভাবিকীকরণের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে না, বরং শক্তির জোরে নিজেদের উপস্থিতি চাপিয়ে দিচ্ছে। ভাষণ শেষে তিনি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ইরান শান্তির সন্ধানে থাকা সব দেশের নির্ভরযোগ্য সঙ্গী ও বন্ধু। আসুন, আমরা একসঙ্গে সংকটকে সুযোগে রূপান্তর করি।’