বিশ্ব যখন গাজার মানবিক বিপর্যয়ে নীরব, ঠিক তখনই ব্রিটিশ-বাংলাদেশি মানবাধিকারকর্মী রুহি লরেন আখতার অংশ নিলেন আন্তর্জাতিক নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-তে। ১৮ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করা এই বহরের লক্ষ্য- ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে গাজার জনগণের কাছে ত্রাণ ও সংহতি পৌঁছে দেওয়া। রুহি ‘রিফিউজি বিরিয়ানি অ্যান্ড ব্যানানা’ (RBB)-এর প্রতিষ্ঠাতা, যা শরণার্থী সহায়তায় কাজ করে আসছে। এদিকে এই মিশনে অংশ নিয়েছেন- বাংলাদেশের অন্যতম আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলম।
রুহির বার্তা
গাজার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগে রুহি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আমি গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় যোগ দিচ্ছি কারণ অন্যায়ের মুখে নীরব থাকা আর সম্ভব নয়। বহুদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে- খাদ্য, পানি, নিরাপত্তা, এমনকি চলাচলের স্বাধীনতাও। এই অবরোধ আর চলতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি শুধু একটি সাহায্যের বহর নয়- এটি একটি বার্তা- যা বিশ্ব দেখছে, এবং আমরা গাজার মানুষের পাশে আছি। ফিলিস্তিন মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কেউই মুক্ত নয়।’
পরিবারের গর্ব এবং উদ্বেগ
রুহির চাচা, নিউক্যাসলের প্রাক্তন লর্ড মেয়র ও স্বতন্ত্র কাউন্সিলর হাবিব রহমান, বলেন, ‘আমি রুহির জন্য গর্বিত। তার সাহস এবং মানবিক মূল্যবোধ আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। অবশ্যই আমরা উদ্বিগ্ন- কারণ যাত্রাটি বিপজ্জনক। কিন্তু মানবতার ডাকের সামনে ভয়কে থামিয়ে রাখা যায় না। বিশ্ব নেতাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস ছেড়ে মানবতার পথে
রুহির এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। তখন তিনি ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস’-এ একজন নিম্ন অঙ্গ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু তিন বছর বয়সী সিরিয়ান শিশু আয়লান কুর্দির সমুদ্রতীরে ভেসে থাকা মরদেহের ছবি তাকে নাড়িয়ে দেয়। চাকরি ছেড়ে তিনি পৌঁছে যান গ্রিসে শরণার্থী শিবিরে।
সেখান থেকেই জন্ম নেয় তার মানবিক সংস্থা ‘রিফিউজি বিরিয়ানি অ্যান্ড ব্যানানাস’। নিউক্যাসলে নিজের পরিবারের হাতে রান্না করা বিরিয়ানি আর বাজার থেকে কেনা কলা দিয়েই যাত্রা শুরু- আজ তা আন্তর্জাতিক এক মানবিক মিশনে রূপ নিয়েছে।
বিরিয়ানি, কলা এবং মানবতা
২০১৫ সাল থেকে, রুহির এই নারী- নেতৃত্বাধীন সংস্থাটি গ্রীস, লেবানন ও গাজার দুর্গম শিবিরগুলোতে হাজার হাজার খাবার, ওষুধ, পোশাক ও জীবনরক্ষাকারী প্যাকেজ পৌঁছে দিয়েছে। এই সংস্থার মূল দর্শন- সহানুভূতির চেয়ে মর্যাদা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শরণার্থীদের ‘উপকারভোগী’ নয়, সম্মানের সাথে ‘অংশীদার’ হিসেবে দেখা হয়।
আজকের প্রেক্ষাপটে রুহি
২০২৫ সালের এই মুহূর্তে, ফিলিস্তিনের অবস্থা আরও বিপর্যয়কর। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, রাজনৈতিক চাপে গলা টিপে ধরা হচ্ছে; প্রতিবাদকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। রুহি বলেন, ‘যখন সরকার এবং রাজনীতিবিদরা জনগণের কণ্ঠস্বর শোনে না, তখন আমাদের- সাধারণ মানুষের- অহিংস, সরাসরি পদক্ষেপ নিতে হয়।’
গাজার পথে পূর্ববর্তী অনেক মানবিক বহরই বাধার সম্মুখীন হয়েছে। রুহি ও তার সহযাত্রীরা সে ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত। তবুও, তারা বিশ্বাস করেন- এই মুহূর্তে নীরব থাকা মানেই অন্যায়ের পাশে দাঁড়ানো।
নিউক্যাসল থেকে গাজা
নিউক্যাসলের মানুষ, যাদের ঘর থেকেই রুহির যাত্রা শুরু, জানে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো কাকে বলে। রুহির পদক্ষেপ সেই শহরেরই এক গভীর সংহতির প্রতীক।
রুহি বলেন, ‘গাজার মানুষ যেন জানে- তাদের সংগ্রাম অশ্রুত নয়। নিউক্যাসল থেকে ভালোবাসা ও ন্যায়ের বার্তা নিয়ে আমরা তাদের পাশে আছি।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন