মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রাজোয়েলিনা সামরিক বিমানে করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে চুক্তির পরই দেশত্যাগ করলেন তিনি। বিশ্বব্যাপী ‘জেনারেশন জেড’ বা ‘জেন-জি’ বিক্ষোভকারীদের চাপের মধ্যে দেশটিতে মাত্র কয়েক সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার উৎখাতের ঘটনা এটি।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিরোধী দলের প্রধান ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। পরে এ খবর নিশ্চিত করেছে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা সিতেনি র্যান্ড্রিয়ানাসোলোনিয়াইকো রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর কিছু ইউনিট বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর রাজোয়েলিনা রোববার দেশত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্সির কর্মীরা আমাদের নিশ্চিত করেছে যে তিনি দেশ ছেড়ে গেছেন।’ প্রেসিডেন্ট বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছেন তা এখনো অজানা।
সামরিক সূত্রে জানা গেছে, রাজোয়েলিনা রোববার একটি ফরাসি সামরিক বিমানে দেশত্যাগ করেছেন। ফরাসি রেডিও আরএফআই জানিয়েছে, তিনি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে একটি চুক্তি করেছেন। স্থানীয় সংবাদে বলা হয়েছে, সেন্ট মেরি বিমানবন্দরে একটি ফরাসি সেনাবাহিনীর কাসা বিমান অবতরণ করে ও পাঁচ মিনিটের মধ্যে হেলিকপ্টার তাকে বিমানে স্থানান্তর করে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মূলত পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের প্রতিবাদে হলেও দ্রুতই দুর্নীতি, দুঃশাসন ও মৌলিক পরিষেবার অভাবে নাগরিক অসন্তোষের বড় আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। বিশেষত, তরুণরা এই বিক্ষোভের মুখ্য অংশ হিসেবে এগিয়ে এসেছে।
সেনাবাহিনী ও জেন্ডারমারি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর শনিবার রাজোয়েলিনা ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ক্যাপস্যাট ইউনিট বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তারা রাজধানী আন্তানানারিভোর প্রধান চত্বরে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এরপর তারা সেনাবাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ করে ও নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের ঘোষণা দেয়।
সিনেট জানিয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালীন সিনেটের সভাপতিকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং জিন আন্দ্রে মাঞ্জারি অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সিনেটের নেতৃত্ব দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
আজ সোমবার রাজধানীর চত্বরে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়ে ‘প্রেসিডেন্টকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে’ দাবিতে স্লোগান দেন। ২২ বছর বয়সি হোটেল কর্মী আদ্রিয়ানারিভোনি ফ্যানোমেগ্যান্টসোয়া বলেন, তার মাসিক বেতন মাত্র ৩ লাখ ডলার হলেও তা খাবারের খরচও মেটাতে যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘১৬ বছরে প্রেসিডেন্ট ও তার সরকার শুধুই নিজেদের ধনী করেছে, জনগণকে দরিদ্র রেখে।’
জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে বিক্ষোভ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। মাদাগাস্কারের জনসংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে, এবং দেশের গড় বয়স ২০ বছরের কম। স্বাধীনতার পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মাথাপিছু জিডিপি ৪৫ শতাংশ কমেছে।