শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০৫:৩৯ পিএম

‘অপরাধ দমনে’ পুরুষদের রক্তের নমুনা নিচ্ছে চীন

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০৫:৩৯ পিএম

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

উত্তর চীনের এক শহরে পুরুষদের রক্তের নমুনা ব্যবহার করে ‘অপরাধ দমনের তথ্যভান্ডার’ তৈরি করছে পুলিশ। দেশটির সরকারের এই উদ্যোগ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একই সঙ্গে উদ্যোগ ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে গোপনীয়তা ও নাগরিক অধিকারের। অনেকে বলছেন, এটি অপরাধ দমনে সহায়ক হবে। আবার অনেকের আশঙ্কা, রাষ্ট্রের হাতে ব্যক্তিগত তথ্য আরও বেশি কেন্দ্রীভূত হবে। ফলে নাগরিক স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

চীনা সাময়িকী চায়না নিউজউইক জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়ার জিলিনহোট শহরের পুলিশ গত মাসে ঘোষণা দেয় যে, তারা পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের মতো সরকারি নথির সঙ্গে যুক্ত তথ্যভান্ডার হালনাগাদ করতে স্থানীয় পুরুষদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করবে। পুলিশ বলেছে, এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো, ‘বয়স্ক ও শিশুদের হারিয়ে যাওয়া ঠেকানো’। একই সঙ্গে তারা আশ্বাস দিয়েছে, সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য ও জৈবিক নমুনা ‘কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে সংরক্ষণ’ করা হবে।

তবে হংকংভিত্তিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, পুলিশের ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ঘোষণা আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে চায়না নিউজউইক-কে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রক্তের নমুনা দেওয়া সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক এবং এতে অস্বীকৃতি জানালে কোনো শাস্তি হবে না। তার ভাষ্যমতে, সংগৃহীত নমুনা স্থানীয় ‘ওয়াই ক্রোমোজোম ব্যাংক’ তৈরিতে ব্যবহার করা হবে।

জিলিনহোট পুলিশের দপ্তরে কল করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

চীনে ‘ওয়াই ব্যাংক’ তৈরির উদ্যোগ শুরু হয় ২০০৭ সালে। হেনান প্রদেশের ঝেংঝু শহরের পুলিশ প্রথম এমন ডেটাবেস স্থাপন করে। সাম্প্রতিক কাইক্সিন ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত ১৮টি প্রদেশে পুলিশ বিভাগ নিজেদের ‘ওয়াই ক্রোমোজোম ব্যাংক’ তৈরির কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছে বা তা নিয়ে সরকারি রেকর্ডে উল্লেখ করেছে।

ওয়াই ক্রোমোজোমভিত্তিক ‘ওয়াই-এসটিআর ফ্যামিলি স্ক্রিনিং’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে একই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের জেনেটিক মিল শনাক্ত করা যায়। এতে সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তির পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ডিএনএ তুলনা করে অপরাধী শনাক্তের পরিসর সংকুচিত করা সম্ভব হয়। এই পদ্ধতি বহু জটিল মামলার সমাধানে সাহায্য করেছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্যানসু প্রদেশের কুখ্যাত বাইয়িন সিরিয়াল হত্যাকাণ্ড, যেখানে ১৯৮৮ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে ১১ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছিল।

তবু জিলিনহোট পুলিশের সাম্প্রতিক উদ্যোগটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দক্ষিণ গুয়াংডং প্রদেশের নানফাং ডেইলি’র এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ডিএনএ তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ধ্বংসের প্রক্রিয়া নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে পর্যাপ্ত তথ্য দেওয়া হয়নি।

নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক তিয়ান ফাং স্থানীয় এক ম্যাগাজিন সাউথ রিভিউ-কে বলেন, এই প্রযুক্তি কেবল নন-কোডিং ডিএনএ বিশ্লেষণ করে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করে না। তার ব্যাখ্যায়, নন-কোডিং ডিএনএ-তে ব্যক্তির বংশ, চোখের রং বা রক্তের গ্রুপ-জাতীয় তথ্য থাকে না।

তবে অন্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যাপ্ত আইনি সুরক্ষা ছাড়া এই তথ্য সংগ্রহ ঝুঁকিপূর্ণ। বেইজিংয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও অর্থনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাপক চেন জুয়েকুয়ান বলেন, ‘নমুনা সংগ্রহের পর বিশ্লেষণের দায়িত্বে কে থাকবে, সেই নমুনা কোথায় রাখা হবে, কতদিন রাখা হবে এসবের কোনো আইনি নিশ্চয়তা নেই। এমনকি ভবিষ্যতে এসব নমুনা অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।’

চীনের বর্তমান আইন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনই একমাত্র বিধান যেখানে রক্ত, প্রস্রাব, আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিসের ছবি সংগ্রহের অনুমতি রয়েছে। এই আইন কার্যকর হয় ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। অন্য আইনে শুধু ‘ব্যক্তিগত তথ্য’-এর উল্লেখ রয়েছে এবং তা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সম্মতি আবশ্যক।

আইনজীবী ও গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহারের জন্য আরও স্পষ্ট ও শক্তিশালী আইনি কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছেন। সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিধি বিশেষজ্ঞ লাও দোংইয়ান ২০২০ সালে সতর্ক করে লিখেছিলেন, তথ্য ফাঁস ও কর্তৃপক্ষের অপব্যবহারের কারণে মুখ শনাক্তকরণ প্রযুক্তিও চীনে ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

Link copied!