ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ সেবুতে ঘূর্ণিঝড় ‘কালমায়েগি’র তাণ্ডবে মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। এই দুর্যোগের রেশ কাটতে না কাটতেই দেশটিতে ফের আঘাত হেনেছে নতুন ঘূর্ণিঝড়- সুপার টাইফুন ‘ফুং-ওং’ (স্থানীয়ভাবে ‘উওয়ান’)। এসব ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কারণে দেশটির বহু এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (৮ নভেম্বর) কালমায়েগির প্রভাবে প্রবল বর্ষণ ও নজিরবিহীন বন্যায় সেবু শহরসহ আশপাশের অঞ্চল প্লাবিত হয়। বন্যার স্রোতে গাড়ি, ঘরবাড়ি, এমনকি জাহাজের কনটেইনারও ভেসে যায়। রাস্তাঘাট, যোগাযোগব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
রোববার (৯ নভেম্বর) সকালে ঘূর্ণিঝড় ‘ফুং-ওং’ ঘণ্টায় প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস এবং ২৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়া নিয়ে ক্যাটানডুয়ানেস প্রদেশের ভিরাক শহর থেকে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থান করছিল।
সরকারি পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, রোববার রাত বা সোমবার ভোরের দিকে ফুং-ওং অরোরা বা ইসাবেলা প্রদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। বাতাসের গতি ১৮৫ কিলোমিটার বা তার বেশি হওয়ায় এটিকে ‘সুপার টাইফুন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় কালমায়েগির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং ফুং-ওংয়ের সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রপতি ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।
দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব গিলবার্তো তেওডোরো জুনিয়র সতর্ক করে বলেন, ‘ফুং-ওং দেশের বিশাল অংশে প্রভাব ফেলতে পারে- এর মধ্যে কালমায়েগি–আক্রান্ত সেবু প্রদেশ ও রাজধানী মেট্রো ম্যানিলাও রয়েছে।’
তিনি জনগণকে বন্যা, ভূমিধস ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। একবার টাইফুন আঘাত হানলে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।’
বেসামরিক প্রতিরক্ষা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ফুং-ওংয়ের প্রভাবে পূর্বাঞ্চলের বহু শহর ও গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিকল অঞ্চলে অন্তত ৫০ হাজার পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ঝড়ের কারণে আগামীকাল সোমবার উত্তরাঞ্চলের সব স্কুল ও সরকারি অফিস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া কয়েকটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং ৮৬টি সমুদ্রবন্দরে ৬ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি যাত্রী ও শ্রমিক আটকা পড়েছেন। উত্তাল সমুদ্রে সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
যদিও ফিলিপাইন সরকার এখনো আন্তর্জাতিক সহায়তার আনুষ্ঠানিক আবেদন জানায়নি, প্রতিরক্ষা সচিব জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানসহ মিত্রদেশগুলো সাহায্য দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
প্রতি বছর গড়ে ২০টিরও বেশি টাইফুন ও ঝড় ফিলিপাইনে আঘাত হানে। পাশাপাশি দেশটিতে সক্রিয় একাধিক আগ্নেয়গিরি ও ভূমিকম্পের ঝুঁকি থাকায় ফিলিপাইনকে বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

