শীত এলেই অনেকের সকাল শুরু হয় গরম কাপড়ে মোড়া অবস্থায়। কিন্তু গোসলের কথা উঠলেই যেন এক অদ্ভুত ভয় কাজ করে ঠান্ডা পানির স্পর্শেই কাঁপুনি, ঠান্ডা লাগা কিংবা অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা! ফলে অনেকেই শীতে নিয়মিত গোসল থেকে বিরত থাকেন। অথচ, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতে গোসল এড়িয়ে যাওয়া শরীর ও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে প্রশ্ন হলো শীতে গোসলের সঠিক সময় কখন?
শীতে গোসল না করলে কী হয়
শরীরের ঘাম, ধুলা ও জীবাণু জমে গেলে ত্বকে সংক্রমণ, চুলকানি, ফুসকুড়ি, এমনকি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ে। ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে ফাটল, খোসা ওঠা বা চুলকানির সমস্যা দেখা দেয়। তা ছাড়া, নিয়মিত গোসল রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, শরীরকে সতেজ রাখে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।
চিকিৎসকদের মতে, শীতকালেও অন্তত দুই দিন পরপর একবার গোসল করা উচিত। যাদের শরীর বেশি ঘামে বা বাইরের কাজে থাকতে হয়, তাদের জন্য প্রতিদিন গোসল করাই শ্রেয়।
গোসল সবচেয়ে উপযোগী সময় কখন?
শীতকালে খুব ভোরে বা রাতের দিকে গোসল করা শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, তখন তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে। শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা হঠাৎ কমে গেলে সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা কিংবা জ্বর দেখা দিতে পারে।
তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে গোসল করাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এ সময় সূর্যের তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি থাকে, শরীর দ্রুত উষ্ণ হয়ে যায় এবং ঠান্ডা বাতাসের প্রভাবও কম থাকে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. ফারহানা রহমান বলেন, শীতকালে ভোরের ঠান্ডা বাতাসে গোসল করলে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা হঠাৎ নেমে যায়। এতে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, ঠান্ডা লাগা বা মাথাব্যথার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সূর্যের আলো উঠার পর, সকাল ৯টার পর গোসল করাই নিরাপদ।
দুপুরে গোসলেরও রয়েছে উপকারিতা
যাদের সকালে সময়ের অভাব বা অফিসের তাড়া থাকে, তারা দুপুরে গোসল করতে পারেন। দুপুর ১টা থেকে ৩টার মধ্যে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল থাকে এবং ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনাও কমে যায়।
এ সময়ে গোসল করলে শরীরের ঘাম, ক্লান্তি ও মানসিক চাপ কমে যায়। বিশেষ করে যারা গৃহস্থালি কাজ বা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাদের জন্য দুপুরের গোসল অনেক আরামদায়ক ও কার্যকর।
কেন ভোর বা সন্ধ্যায় গোসল ঝুঁকিপূর্ণ
শীতকালে ভোর বা সন্ধ্যায় তাপমাত্রা হঠাৎ নেমে যায়। এই সময়ে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়। ফলে সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, জ্বর, হাঁপানি এবং জয়েন্টের ব্যথা বাড়তে পারে।
বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু, গর্ভবতী নারী এবং হৃদরোগী বা হাঁপানির রোগীদের জন্য এই সময়গুলোতে গোসল করা ঝুঁকিপূর্ণ।
কুসুম গরম পানি ব্যবহার অপরিহার্য
শীতকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল না করে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা উচিত। তবে খুব গরম পানি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে ত্বককে শুষ্ক করে তোলে। তাই মাঝারি তাপমাত্রার পানি সবচেয়ে উপযুক্ত।
এ ছাড়া, গোসল শেষে শরীরে ময়েশ্চারাইজার বা তেল ব্যবহার করা ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং চুলকানি রোধ করে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শীতে গোসলের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন গোসলের পর ভেজা চুল ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। ঠান্ডা বাতাসে ভেজা অবস্থায় বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। গোসল শেষে দ্রুত শুকনো ও গরম পোশাক পরুন। ত্বক আর্দ্র রাখতে নারিকেল তেল বা বডি লোশন ব্যবহার করুন। শীতের দিনে সকালে সূর্যের আলোয় কিছুক্ষণ সময় কাটালে শরীরে ভিটামিন-ডি তৈরি হয়, যা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে গোসল করলে শরীর সতেজ থাকে, মন প্রফুল্ল হয় এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়। একই সঙ্গে শারীরিক ক্লান্তি ও মানসিক চাপও অনেক কমে যায়। তাই আবহাওয়া যতই ঠান্ডা হোক না কেন, নিয়মিত ও সময়মতো গোসল করা সুস্থ জীবনের অন্যতম শর্ত।

