ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া ২৮ দফার শান্তিচুক্তি নিয়ে জেনেভায় চলমান আলোচনায় বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে কয়েক দিনের মধ্যে শান্তিচুক্তির সব দফা চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে রোববার (২৩ নভেম্বর) রাতে বৈঠক শেষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। আলোচনায় ইউক্রেন ও ইউরোপের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।
জেনেভার যুক্তরাষ্ট্র মিশনে রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং ন্যাটোর ভূমিকা কী হবে, সে বিষয়ে এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। তবে তাঁর দল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রস্তাবিত ২৮ দফার অমীমাংসিত অনেক বিষয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনতে পেরেছে।
রুবিওর ভাষায়, ‘আজ আমরা যা অর্জন করেছি, তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।’
এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার প্রতি ইউক্রেন কৃতজ্ঞ নয়। জেনেভায় বৈঠকের আগে ট্রাম্পের এই মন্তব্য ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের ওপর চাপ তৈরি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বৈঠকে ইউক্রেনের পাশাপাশি ইউরোপের কর্মকর্তারাও ট্রাম্পের প্রস্তাবের নানা দফা নিয়ে আপত্তি জানান। বিশেষ করে, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী সংকোচন এবং ভূমি ছাড়ের বিষয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবে যা আছে, তাঁরা তা পরিবর্তনের দাবি জানান।
নিজেদের বিকল্প প্রস্তাবে ইউরোপের কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার চেয়ে ইউক্রেনকে আরও বড় সশস্ত্র বাহিনী রাখার অনুমতি দেওয়া হোক। আর ভূমি-সংক্রান্ত আলোচনা পূর্বনির্ধারিত কোনো দৃষ্টিভঙ্গির বদলে বর্তমান রণক্ষেত্রের সম্মুখসারি (ফ্রন্ট লাইন) থেকে শুরু হওয়া উচিত।
শুক্রবার ট্রাম্প বলেছিলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে ইউক্রেনকে তাঁর পরিকল্পনায় সম্মতি জানাতে হবে। অন্যথায় তিনি ভিন্ন কিছু ভাববেন।
ট্রাম্পের ২৮ দফা অনুযায়ী, ইউক্রেনকে নিজেদের পূর্ব দিকের পুরো দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে হবে। অথচ এই অঞ্চলের কিছু এলাকা এখনো ইউক্রেনের সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দনবাস ছাড়ার বিনিময়ে ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণে নেওয়া এলাকা ছাড়বে রাশিয়া। তা ছাড়া ইউক্রেনকে নিজেদের সশস্ত্র বাহিনীর আকার ছয় লাখের মধ্যে নামিয়ে আনতে এবং ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে।

গত শুক্রবার সময় বেঁধে দেওয়ার পরের দিন শনিবার নিজের অবস্থান কিছুটা নমনীয় করে ট্রাম্প বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ করার জন্য আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি, তা চূড়ান্ত নয়। এতে পরিবর্তনের সুযোগ আছে।’
জেনেভায় আলোচনা শেষে রুবিও বলেন, ‘এখনো কিছু বিষয়ে আমরা একমত হতে পারিনি। আশা করি বৃহস্পতিবারের মধ্যে আমরা এসব বিষয়ে একমত হতে পারব। তবে এসব বিষয় মিটমাট করতে প্রয়োজনে সময় আরও বেশিও লাগতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেনেভায় সোমবারও আলোচনা চলবে।
দুটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা ভলোদিমির জেলেনস্কির সম্ভাব্য যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়েও আলোচনা করেছেন। শান্তি প্রস্তাব নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য চলতি সপ্তাহেই তিনি ওয়াশিংটনে যেতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাব ইউক্রেন সংঘাত সমাধানের ভিত্তি হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার নিজেদের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের তিনি এ কথা বলেন। তবে কিয়েভ যদি প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে রুশ সেনাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন পুতিন।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন