ঢাকা বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

৪ শতাধিক মৃত্যু ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার কেন এত ভয়ঙ্কর হয়েছিল?

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ১০:৫৬ এএম
শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড়। ছবি - সংগৃহীত

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার ভারত মহাসাগরে সক্রিয় ছিল। গত ২৬ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ–পূর্বে এর সৃষ্টি হয় এবং পূর্ব উপকূল বরাবর সরতে সরতে বারবার ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। শত শত মানুষের মৃত্যুসহ বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় থামলে পরে ঘূর্ণিঝড়ের দুর্বল অবশিষ্টাংশ ভারতীয় উপকূলে পৌঁছে চেন্নাইয়ের কাছাকাছি অবস্থান করে।

ভারত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় স্বাভাবিক ঘটনা হলেও ডিটওয়ার ছিল ব্যতিক্রম। এটি এমন স্থানে তৈরি হয়েছিল, যেখানে সাধারণত ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় না। শ্রীলঙ্কাও এই ধরনের ঘূর্ণিঝড়–অভিজ্ঞ নয়, তাই যথাযথ প্রস্তুতির অভাব ছিল। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে প্রবেশ না করে উপকূলের সমান্তরালে চলেছে, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যদিও এটি দুর্বল মাত্রার সাইক্লোন ছিল, তবুও শ্রীলঙ্কায় এর প্রভাব অস্বাভাবিকভাবে বড় ছিল।

শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড়

শ্রীলঙ্কা ভারত বা ফিলিপাইনের মতো ঘূর্ণিঝড়–প্রবণ নয়। ২০০০ সালের পর দেশটি অন্তত ১৬টি ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হয়েছে—বেশিরভাগই ছিল মৃদু। দেশটি ৫–১০° উত্তর অক্ষাংশে, বিষুবরেখার কাছাকাছি অবস্থানে হওয়ায় এখানে সাধারণত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় না। কারণ বিষুবরেখার কাছে কোরিওলিস বল দুর্বল, যা ঘূর্ণিঝড় গঠনের প্রধান উপাদান।

ধ্বংসাত্মক ডিটওয়ার

২৫ নভেম্বর দক্ষিণ–পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের এক নিম্নচাপ থেকে ডিটওয়ার উৎপত্তি হয়। যদিও অঞ্চলটি ঘূর্ণিঝড় তৈরির জন্য পরিচিত নয়, তখন দুটি অনুকূল পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল—ইন্টার–ট্রপিক্যাল কনভারজেন্স জোন (আইটিসিজেড) অত্যন্ত সক্রিয় ছিল এবং একই সময়ে একটি নিরক্ষীয় তরঙ্গ বায়ুমণ্ডলে সক্রিয় হয়। এ দুটি ব্যবস্থার মিথস্ক্রিয়ায় ২৬ নভেম্বর ডিটওয়ার গঠিত হয়।

ঘূর্ণিঝড়টি বাট্টিকালোয়া থেকে প্রায় ৯০ কিমি উত্তর–পশ্চিমে অবস্থান করছিল, এবং বাতাসের গতি ছিল ৬০–৯০ কিমি/ঘণ্টা। এটি ধীরগতিতে চলছিল, যা ক্ষতির মাত্রা বাড়ায়। একই সঙ্গে এটি স্থলভাগে প্রবেশ না করে শ্রীলঙ্কার পূর্ব উপকূলের সমান্তরালে অগ্রসর হওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস এবং প্রবল বাতাস স্থায়ী হয়।

২৯ নভেম্বর ভোর পর্যন্ত ডিটওয়ার শ্রীলঙ্কায় অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত ঘটায়—কিছু স্থানে ২৪ ঘণ্টায় ৪০০ মিমি পর্যন্ত। ফলে পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধস, সমুদ্রের জলে উপকূল প্লাবিত হওয়া এবং বিস্তৃত বন্যা দেখা দেয়।

সতর্কতা এবং প্রস্তুতি

ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) আঞ্চলিক বিশেষায়িত আবহাওয়া কেন্দ্র হিসেবে ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কাসহ সাতটি দেশকে সতর্কতা প্রদান করে। গত ১৩ নভেম্বর নিম্নচাপের পূর্বাভাস এবং ২০ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্কতা দেয় এই প্রতিষ্ঠানটি। ২৩ নভেম্বর থেকে প্রতি তিন ও ছয় ঘণ্টায় নিয়মিত আপডেট শ্রীলঙ্কার সঙ্গে শেয়ার করে।

তবুও শ্রীলঙ্কার কাছে ভারতের মতো দ্রুত বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সরানোর মতো স্থানান্তর ব্যবস্থা নেই। ফলে সতর্কতা পাওয়া সত্ত্বেও সীমিতসংখ্যক মানুষকে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা যায়। এই ঘূর্ণিঝড় পূর্ব উপকূলের ভৌগোলিক দুর্বলতাও ক্ষয়ক্ষতি বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।

বর্তমান পরিস্থিতি

ডিটওয়ার এখন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং আজ বুধবারের মধ্যে এটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এটি তামিলনাড়ু উপকূলের কাছে দক্ষিণ–পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।

আইএমডি জানিয়েছে, এটি আরও দুর্বল হয়ে পরবর্তী ১২ ঘণ্টার মধ্যে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হবে।