ঢাকা বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ায় ‘ডুয়েল ট্র্যাক’ কৌশলে ট্রাম্প

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৫, ০৬:২৬ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

ইরান-ইসরায়েল ও রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ছায়া যখন পুরো বিশ্বজুড়ে পড়ছে, ঠিক সেই সময় দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা সংকটও হোয়াইট হাউজে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ৩৫ মিনিট ফোনালাপ করেছেন। অন্যদিকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।

বুধবার (১৮ জুন) এ ফোনালাপের বিষয়টি এক বিবৃতির মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। তবে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের আগ মুহূর্তে মোদির সঙ্গে তার ফোনালাপ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

বিবৃতিতে বিক্রম মিশ্র জানিয়েছেন, মোদি-ট্রাম্প ফোনালাপে ইরান-ইসরায়েল ও রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যু উঠলেও বেশিরভাগ আলোচনা ঘুরপাক খেয়েছে ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাত ঘিরে। মোদি জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সিদ্ধান্তমূলক ও পরিমিত পদক্ষেপ নিয়েছে—বিশেষ করে ৬ ও ৭ মে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে লক্ষ্য কর হামলা চালিয়ে।

মোদির মতে, ভারতের কড়া সামরিক জবাবে পাকিস্তানকে ‘সামরিক অভিযান বন্ধের অনুরোধ’ জানাতে বাধ্য হতে হয়েছে। মোদি নিশ্চিত করেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে এই সংলাপে বাণিজ্য চুক্তি কিংবা মধ্যস্থতার মতো কোনো বিষয় উত্থাপিত হয়নি।

ট্রাম্প মোদির বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং ভারতের ‘সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের প্রতি পূর্ণ সমর্থন’ জানিয়েছেন।

ভারতের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন জানানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে মধ্যাহ্নভোজে বসতে যাচ্ছেন পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে। বৈঠকটি হচ্ছে সম্পূর্ণ গোপনীয়, সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো কৌশল— এক হাতে শক্তি প্রদর্শন, অন্য হাতে দরজার ফাঁক রেখে আলোচনার সুযোগ।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, বিশেষ করে জেনারেল মুনির বর্তমানে দেশটির কৌশলগত ও পররাষ্ট্রনীতিতে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছেন। এমন অবস্থায় ট্রাম্প প্রশাসনের এই গোপন বৈঠক প্রশ্ন তুলছে— যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও পাকিস্তানকে ‘আঞ্চলিক ভারসাম্য’ রক্ষার একটি কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে?

এই দুই কূটনৈতিক পদক্ষেপ— একদিকে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানকে প্রকাশ্যে সমর্থন, অন্যদিকে পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে নিভৃতে আলোচনা—স্পষ্ট করে যে, ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তি ও প্রভাবের ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছে।

এটি সম্ভবত এমন একটি বার্তা দিচ্ছে যেখানে বলা হচ্ছে, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পাশে, তবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পাকিস্তানকে বাইরে রাখা যাবে না।