ঢাকা শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নেপালের নতুন অধ্যায়ের নেতৃত্বে কে এই সুশীলা কার্কি

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ১১:১১ পিএম
নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি। ছবি- সংগৃহীত

প্রবল রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করল নেপাল। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি শুক্রবার রাতে দেশটির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাউডেল, জেন-জি আন্দোলনের প্রতিনিধি এবং নেপাল সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেলের মধ্যে এক ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত কয়েক দিনের নজিরবিহীন দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির পদত্যাগের মধ্য দিয়ে এ সমঝোতা চূড়ান্ত হয়।

বিচারপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী

৭৩ বছর বয়সি সুশীলা কার্কি মূলত রাজনীতিক নন। নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার জিরো টলারেন্স নীতি তাকে যেমন জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে, তেমনি সমালোচনার মুখেও ফেলেছিল।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান তাকে বর্তমান রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। দুর্নীতি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার বিরুদ্ধে উত্তাল প্রতিবাদকারীদের বড় অংশই তাকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের পক্ষে চাপ সৃষ্টি করে।

কার্কির নিয়োগের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে বাংলাদেশের নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে, যিনি গত বছর ছাত্র আন্দোলনের পর শেখ হাসিনার পতনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

শৈশব ও শিক্ষা

১৯৫২ সালে পূর্ব নেপালের এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সুশীলা কার্কি। তারা সাত ভাই-বোন। তার পরিবার ১৯৫৯ সালে নেপালের প্রথম গণতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল।

কার্কি ১৯৭২ সালে মহেন্দ্র মরাং ক্যাম্পাস থেকে বিএ সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৭৫ সালে ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিন বছর পর, ১৯৭৮ সালে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৮৫ সালে তিনি ধরণস্থ মহেন্দ্র মাল্টিপল ক্যাম্পাসে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন, পাশাপাশি ১৯৭৯ সাল থেকে বিরাটনগরে আইন পেশায়ও যুক্ত ছিলেন।

বিচারবিভাগে উত্থান ও বিতর্ক

২০০৯ সালে নেপালের সুপ্রিম কোর্টে অস্থায়ী বিচারক হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয়। এক বছর পর তিনি স্থায়ী বিচারক হন এবং ২০১৬ সালের জুলাইয়ে প্রধান বিচারপতির পদে আসীন হন।

তবে ২০১৭ সালের এপ্রিলে তাকে ঘিরে বড় বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তৎকালীন শাসকদল নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র)-এর কয়েকজন সংসদ সদস্য তাকে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে অভিশংসনের উদ্যোগ নেন। ওই অভিযোগ ছিল দুর্নীতিবিরোধী কমিশনের প্রধানকে অযোগ্য ঘোষণার রায়কে কেন্দ্র করে। অভিযোগ গৃহীত হওয়ার পরপরই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

তবে এই পদক্ষেপ উল্টো ফল আনে। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় জনসাধারণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, সুপ্রিম কোর্টও হস্তক্ষেপ করে অভিশংসন প্রক্রিয়া স্থগিত করেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তাব প্রত্যাহার হয় এবং সুশীলা কার্কি পুনরায় পদে ফিরে আসেন। অবশেষে ২০১৭ সালের জুনে অবসর গ্রহণ করেন।

প্রধান বিচারপতি থাকাকালে তিনি তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী জয়া প্রকাশ প্রসাদ গুপ্তার দুর্নীতির মামলায় ঐতিহাসিক দণ্ডাদেশ দেন।

যে বিক্ষোভ তাকে ক্ষমতায় নিল

গত সপ্তাহে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫১ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। পুলিশের গুলিতে নিহতদের মধ্যে ২১ জন আন্দোলনকারী, ৯ জন বন্দি, ৩ জন পুলিশ সদস্য এবং ১৮ জন সাধারণ মানুষ ছিলেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিক্ষোভ শুরু হয় দুর্নীতি এবং অলি সরকারের আরোপিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে। এটি ভিন্নমত দমনের চেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছিল। যদিও পরে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়, তবু সহিংসতা বাড়তে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত অলি পদত্যাগ করেন।

এদিকে শুক্রবার কাঠমান্ডুর বিভিন্ন স্থানে দোকানপাট পুনরায় চালু করা হয়েছে। সেনারাও রাস্তাঘাট থেকে সরে যেতে শুরু করেছেন। পুলিশ এখন রাইফেলের পরিবর্তে লাঠি হাতে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে টহল দিচ্ছে।