সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া, এশিয়ার কালো টাকা যেভাবে মিশে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যে

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিগত কয়েক দশক ধরে লন্ডনের আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও সম্পত্তির বাজার রহস্যময় বা অজানা উৎসের অর্থের জন্য নিরাপদ বিনিয়োগস্থল হিসেবে কাজ করছে। এখানকার বিলাসবহুল ভবনগুলো যেন বৈশ্বিক দুর্নীতির এক নীরব সাক্ষী হয়ে উঠেছে। মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলো যখন ন্যায়বিচার চাচ্ছে, তখন ব্রিটেন আবারও তাকে বিশ্বের প্রধান ‘লন্ড্রোম্যাট’ (কালো টাকা সাদা করার মেশিন) হিসেবে দেখতে বাধ্য করছে। ফলে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের তদন্তকারীরা এখন পাচারকৃত এসব অর্থের সুরক্ষায় ব্রিটেনের নেতিবাচক ভূমিকা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। কারণ দেশটি বিশ্বজুড়ে দুর্নীতিগ্রস্তদের জন্য অর্থ পাচারের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে এসব উঠে এসেছে। 

চলতি সেপ্টেম্বরের শুরুতে মালয়েশিয়ার তদন্তকারীরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের লন্ডনে থাকা কথিত সম্পদের তদন্ত শুরু করেন। মাহাথির তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে এই ঘোষণাটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বৃহত্তর অঞ্চল থেকে সম্ভাব্য দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ সংরক্ষণে ব্রিটেনের রহস্যময়ী ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

গত জুনে মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুরোধে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ প্রয়াত মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী দাইম জাইনুদ্দিনের সম্পদের তদন্তের অংশ হিসেবে ১৮ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পত্তি জব্দ করে। দাইম ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এই সম্পদের মধ্যে লন্ডনের সিটি এলাকার দুটি বাণিজ্যিক ভবন এবং ম্যারিলিবোন ও বেইজওয়াটারে বিলাসবহুল বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মালয়েশিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে অবৈধ অর্থের প্রবাহ নতুন কোনো ঘটনা নয়। এই অবৈধ অর্থ প্রায়শই বৈধ সম্পদের সঙ্গে মিশিয়ে শেল কোম্পানি এবং অফশোর কাঠামোর মাধ্যমে পাচার করা হয়। ফলে তাদের উৎস শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ২০২০ সালে মার্কিন কর্তৃপক্ষ অনুমান করে, মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল ওয়ান এমডিবি থেকে চুরি করা ৩৪ কোটি মার্কিন ডলার ব্রিটিশ সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এই অর্থ ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের মতো ট্যাক্স হ্যাভেনের মাধ্যমে পাচার করা হয়।

শুধু মালয়েশিয়া নয়, বাংলাদেশও একই ধরনের দুর্নীতির শিকার। গত মে মাসে ইউকের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগীদের মালিকানাধীন প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে-এর পরবর্তী তদন্তে শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত ৪০ কোটি পাউন্ডেরও বেশি মূল্যের সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে, যার মধ্যে মেফেয়ারের প্রাসাদ, সারে এস্টেট এবং মার্সিসাইডের ফ্ল্যাটও রয়েছে।

এসব তথ্য প্রকাশের পর রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিককে ব্রিটিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এই পদের দায়িত্ব দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম তদারকি করা। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের পতনের পর তার আর্থিক কর্মকাণ্ড নিয়ে গভীর তদন্ত শুরু হয়েছে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ধারণা করছে, হাসিনার শাসনামলে প্রায় ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার লুট করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও ব্রিটেনের আইনি ব্যবস্থা এখনো নড়বড়ে। যদিও ২০১৮ সাল থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট মূল ভূখণ্ডের বাইরের অঞ্চলগুলোতে মালিকানা নিবন্ধনের জন্য আরও স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করছে। তবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে, ক্যারিবীয় অঞ্চলের পাঁচটি ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরি (যার মধ্যে কেম্যান আইল্যান্ডস এবং ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস অন্তর্ভুক্ত) এখনো বৈশ্বিক অর্থ পাচারের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এই অঞ্চলগুলো দিয়ে গত ৩০ বছরে ৭৯টি দেশ থেকে প্রায় ২৫ হাজার কোটি পাউন্ডের অবৈধ অর্থ পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

দুর্নীতির এই বিশাল অঙ্কের কারণে এখন মূল্য দিতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনীতিকে। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয় (ইউএনওডিসি) অনুমান করে, উন্নয়নশীল দেশগুলো ঘুষ, আত্মসাৎ এবং অন্যান্য দুর্নীতির কারণে বছরে চার হাজার কোটি মার্কিন ডলার হারায়। ইউএনওডিসি সম্পদ পুনরুদ্ধার নির্দেশিকায় বলেছে, ‘এই কারণেই এই অর্থ পুনরুদ্ধার করা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’

রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ঘটনা খুবই পরিচিত এশিয়ায়। প্রায় দুই বছর আগে শ্রীলঙ্কায়, গত বছর বাংলাদেশ এবং সর্বশেষ আগস্টের শেষ দিকে নেপালে গণবিক্ষোভের মুখে সরকার পতন হয়েছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশেও ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ এবং অস্থিরতার লক্ষণ দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। বিক্ষোভ চলছে ফিলিপাইনে। এর কয়েকদিন আগে পূর্ব তিমুরেও একই পরিস্থিতি দেখা গেছে। এসব জন অসন্তোষের পেছনে মূল কারণ ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন দুর্নীতি এবং তাদের সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের ভোগ-বিলাস। সম্প্রতি অর্থবিষয়ক বিভিন্ন তদন্তে দেখা যাচ্ছে, এসব রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতির বিশাল অর্থের বেশির ভাগই পাচার করা হয়েছে যুক্তরাজ্যে। ফলে লন্ডনের আকাশচুম্বী ভবনগুলো এশিয়ার কোটি মানুষের কাছে পাচার করা স্বপ্নের ওপর নির্মিত দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!