ঢাকা সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রোহিঙ্গা গ্রাম ধ্বংস করে সেনাঘাঁটি গড়েছে মিয়ানমার: জাতিসংঘ

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫, ০৫:৩১ পিএম
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা বাসিন্দারা। ছবি- সংগৃহীত

২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার পর মিয়ানমারের সেনারা পরিকল্পিতভাবে গ্রাম ও মসিজদ ধ্বংস করেছে বলে জাতিসংঘ-সমর্থিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে তথ্য উঠেছে। রোহিঙ্গাদের কৃষিজমি দখল করে সেখানে নিরাপত্তা ফাঁড়ি গড়ে তোলে।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স

২০১৭ সালের আগস্টে সশস্ত্র হামলার জবাবে সেনারা অভিযান শুরু করলে সহিংসতা হঠাৎ বেড়ে যায়। লাখ লাখ রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। জাতিসংঘ সে সময় ঘটনাকে ‘জাতিগত নির্মূলের পাঠ্যপুস্তকের উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করে। বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে।

মিয়ানমারের জন্য স্বাধীন তদন্তকারী ব্যবস্থার (আইআইএমএম) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনারা রোহিঙ্গা গ্রাম, মসজিদ, কবরস্থান ও জমি ধ্বংস করেছে। সরকারি রেকর্ড থেকে তারা রোহিঙ্গাদের জমির মালিকানা সম্পর্কেও অবগত ছিল।

তদন্তে প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা, স্যাটেলাইট চিত্র, ভিডিও ফুটেজ, সরকারি নথি ও ডকুমেন্টেশন ব্যবহার করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ বিষয়ে মন্তব্য চাইলে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সাড়া দেননি। সেনারা আগেও দাবি করেছে, ২০১৭ সালের অভিযানে গণহত্যা হয়নি, তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অপরাধ হয়ে থাকতে পারে।

নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের একদিন আগে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের শিবিরের চাপ ও স্থবির প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা আলোচনায় আসবে। তদন্তে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় চুক্তির অধীনে কিছু বেসরকারি কোম্পানি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গ্রাম গুঁড়িয়ে দিতে যন্ত্রপাতি এবং শ্রম সরবরাহ করেছে।

উদাহরণ হিসেবে ইন ডিন গ্রামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে রয়টার্স এখানে ১০ রোহিঙ্গা পুরুষ হত্যার খবর প্রকাশ করেছিল। আইআইএমএম জানায়, ওই এলাকা ধ্বংস করে সেনারা নতুন ঘাঁটি গড়ে। সেখানে নতুন রাস্তা, স্থায়ী ভবন, সুরক্ষিত কম্পাউন্ড ও দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হয়।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনারা অং সান সু চির সরকার উৎখাত করে অভ্যুত্থান ঘটায়। গৃহযুদ্ধে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে মিয়ানমার।

২০১৮ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল আইআইএমএম গঠন করে। তাদের কাজ হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত ও বিচারের সুবিধার্থে প্রমাণ সংগ্রহ করা। তবে বর্তমানে তহবিল সংকটে পড়েছে সংস্থাটি। ওপেন-সোর্স তদন্ত দল সরাসরি প্রভাবিত হয়েছে। বছরের শেষের পর কাজ চালিয়ে যেতে অর্থ নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

রাখাইনে সহিংসতা আবারও বেড়েছে। নতুন করে বাস্তুচ্যুতির শঙ্কায় রোহিঙ্গারা আতঙ্কে রয়েছে। সম্প্রদায়ের কিছু সদস্য অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে।

আইআইএমএম প্রধান নিকোলাস কৌমজিয়ান বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের সুযোগ দিতে হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের গ্রামঘর আর টিকে নেই।