ইউক্রেনীয় সেনারা এফপিভি ড্রোন ব্যবহার করে একটি রাশিয়ান হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছেন মানবহীন সিস্টেম বাহিনীর কমান্ডার রবার্ট ‘মাদিয়ার’ ব্রোভদি। তিনি টেলিগ্রামে লেখেন, ৫৯তম মানবহীন সিস্টেম ব্রিগেডের পাইলটরা একটি এমআই-২৮ হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে। প্রতিটি হেলিকপ্টারের দাম প্রায় ১৮ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে এফপিভি ড্রোনের মূল্য ৫০০ ডলার।
সঙ্গে তিনি ৩০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে ড্রোনটি হেলিকপ্টারে আঘাত করে এবং বিস্ফোরণের পর সেটি আগুনে জ্বলে পড়ে যায়। তবে হামলার স্থান প্রকাশ করা হয়নি। কিয়েভ পোস্ট ভিডিওর সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
অন্যদিকে, রাশিয়ান সামরিক ব্লগাররা দাবি করেছে, ভূপাতিত হওয়া হেলিকপ্টারটি এমআই-২৮ নয়, বরং একটি এমআই-৮ পরিবহন হেলিকপ্টার। তাদের ভাষ্যমতে, পাইলটরা বেঁচে গেছেন এবং পদাতিক বাহিনী উদ্ধার করেছে।
রাশিয়ার আধুনিক আক্রমণ হেলিকপ্টার এআই-২৮ ‘নাইট হান্টার’ নামে বেশ পরিচিত। এতে ৩০ মিলিমিটার কামান, নির্দেশিত ও অনির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। সাঁজোয়া ক্রু কেবিন ও উন্নত নাইট ভিশন সিস্টেম রাত্রীকালীন যুদ্ধে এটিকে সাঁজোয়া যান, দুর্গ ও শত্রু ধ্বংসে কার্যকরি করে তোলে। প্রতিটি হেলিকপ্টারের দাম প্রায় ১৮ মিলিয়ন ডলার। রাশিয়া ইরানকে এআই-২৮ সরবরাহ করেছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করছে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ডেনমার্কে রহস্যজনক ড্রোন কার্যকলাপের কারণে কয়েকটি বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোপেনহেগেন সম্ভাব্য রাশিয়ান সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দিয়েছে। ওপেন সোর্স-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অরিক্স জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ১৮টি এআই-২৮ ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
এআই-৮ হলো সোভিয়েত/রাশিয়ান বহুমুখী হেলিকপ্টার, যা ১৯৬০-এর দশক থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে। সৈন্য পরিবহন, কার্গো বহন, মেডেভ্যাক, এয়ারড্রপ ও যুদ্ধ মিশনে এটি বহুল ব্যবহৃত। ২৪ জন যাত্রী বা কয়েক টন পণ্য বহন করতে সক্ষম এই হেলিকপ্টার এখনো বিশ্বের বহু দেশে নির্ভরযোগ্যভাবে ব্যবহৃত হয়।
পরে ৫৯তম পৃথক অ্যাসল্ট ব্রিগেডের প্রথম মানবহীন সিস্টেম ব্যাটালিয়ন, যা ‘উচ্চতা শিকারী’ ইয়াকিভ হ্যান্ডজিউকের নামে নামকরণ করা, টেলিগ্রামে পূর্ণ ভিডিও প্রকাশ করে। এতে নিশ্চিত হয় যে লক্ষ্যবস্তু আসলে একটি এআই-৮।
ইউনিট জানায়, মাত্র ৫০০ ডলারের একটি এফপিভি ড্রোন দিয়ে ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের একটি রাশিয়ান এআই-৮ ধ্বংস করা হয়েছে। তারা গোয়েন্দা সংস্থা, সদর দপ্তর ও পাইলটদের সমন্বিত প্রচেষ্টাকে এই সাফল্যের কৃতিত্ব দেয়।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা পরিষেবা (এসবিইউ) গত বছর এক হাজার ডলার মূল্যের ইউক্রেনীয়-নির্মিত ডার্টস এফপিভি ফিক্সড-উইং ড্রোন ব্যবহার করে দুটি রাশিয়ান হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছিল। একটি এআই-২৮ এবং একটি এআই-৮।
ইউনাইটেড২৪ জানায়, ২০২৪ সালের আগস্টে এসবিইউর স্পেশাল অপারেশনস সেন্টার ‘এ’ দুটি হামলা চালায়। ৬ আগস্ট প্রথম ঘটনায় ‘গ্লাইবা’ নামে এক অপারেটর অবতরণের সময় আকাশে থাকা একটি এআই-২৮-কে আঘাত করে। কয়েকদিন পর একই ইউনিট একটি এআই-৮-কে ধাওয়া করে নিচু উচ্চতায় আঘাত হানে।
কিয়েভ পোস্ট যাচাইকৃত ভিডিওতে এআই-২৮ হামলার দৃশ্য প্রকাশ করে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, আক্রমণটি কোয়াডকপ্টার বা বিমানবিধ্বংসী ব্যবস্থা দিয়ে চালানো হয়েছে। পরে ডিফেন্স এক্সপ্রেস নিশ্চিত করে, উভয় হেলিকপ্টারই ডার্টস ড্রোন দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত। ডার্টস ড্রোন বড় ওয়ারহেড বহন করে এবং কোয়াডকপ্টারের তুলনায় দ্রুতগতিসম্পন্ন।
অপারেটর গ্লাইবা জানান, প্রথমে তাকে সাঁজোয়া যান আক্রমণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মাঠে ছায়ার মতো কিছু দেখে তিনি ড্রোনটি সেদিকে পরিচালনা করেন। কাছে গিয়ে বুঝতে পারেন, সেটি একটি হেলিকপ্টার। আঘাত হানার পর কয়েক সেকেন্ড পুরো দল হতবাক হয়ে যায়।
এআই-২৮-এ আক্রমণে একটি দল অংশ নেয়। আর এআই-৮ প্রায় ১০ মিনিট ধরে ধাওয়া করে আঘাত হানা হয়। গ্লাইবা বলেন, ডার্টস ড্রোন মূলত স্থির লক্ষ্যবস্তুর জন্য তৈরি হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে বিমান ভূপাতিত করতেও সক্ষম প্রমাণিত হয়েছে।