প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে নিজ উপকূল ছেড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ এখন আরেক প্রান্তে, চীনের উপকূলে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ফিলিপাইনকে পাশে নিয়ে ওয়াশিংটন এখন চীনের সামুদ্রিক আধিপত্য ঠেকাতে মরিয়া।
সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ফাঁস করেছে পেন্টাগনের নীতিগত প্রধান এলব্রিজ কলবির একটি গোপন স্মারকলিপি। এতে জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসন তার সামরিক মনোযোগ ইউক্রেন থেকে সরিয়ে নিয়ে সরাসরি চীনের দিকে মোড় নিচ্ছে। আর সে কারণেই চীনও এখন সাগরে আরও গভীরভাবে তার সামরিক প্রভাব বাড়াতে শুরু করেছে।
পূর্ব প্রশান্তে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে চীন একের পর এক অভিযান চালাচ্ছে। নতুন অঞ্চলে জাহাজ, যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে, সম্প্রসারণ করছে সামরিক উপস্থিতি।
গত জুনে চীনের দুটি বিমানবাহী রণতরী পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে যৌথ মহড়ায় অংশ নেয়। এক হাজারের বেশি যুদ্ধবিমান উড়িয়ে চীন নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র উত্তর ফিলিপাইনে মোতায়েন করেছে বিমানবাহী রণতরী বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, যা চীনের ‘প্রথম দ্বীপ শৃঙ্খল’ অতিক্রমকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এই মহড়াকে ‘উসকানিমূলক’ বলছে। ওয়াশিংটনের দাবি, এটি তাইওয়ানের জন্য বড় হুমকি। স্বশাসিত দ্বীপটি চীন নিজেদের অংশ দাবি করে এবং বহুবার জোর করে দখলের হুমকি দিয়েছে। তাই চীনের সামরিক মহড়াকে মার্কিন কর্মকর্তারা আক্রমণের প্রস্তুতি বলেই মনে করছেন।
তবে চীন যদি সত্যিই তাইওয়ানে হামলা চালায়, তখন যুক্তরাষ্ট্র কী করবে—তা স্পষ্ট করে বলেননি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ওয়াশিংটন এখন পর্যন্ত তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সাহায্য পাঠাচ্ছে, সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র বিক্রি করছে।
যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র একা নামবে না, এটা পরিষ্কার। তার এশীয় মিত্রদেরও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে চাপ দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। দেশগুলোর মোট দেশজ উৎপাদনের ৫ শতাংশ সামরিক খাতে খরচ করতে বলা হচ্ছে। তবে জাপান সে ব্যয় সীমা ২ শতাংশের মধ্যে রাখতে চাইছে। দক্ষিণ কোরিয়া ইতোমধ্যেই নিজেদের সামরিক ব্যয়কে ‘উচ্চ’ বলে উল্লেখ করেছে।
তাইওয়ান থেকে ৫০০ মাইলেরও কম দূরে জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপে এখন কয়েক হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। পুরো জাপানজুড়ে রয়েছে ৫৫ হাজার মার্কিন সামরিক কর্মী। দক্ষিণ কোরিয়ায় আরও রয়েছে ২৮ হাজার। গুয়ামে মোতায়েন রয়েছে পারমাণবিক সাবমেরিন ও দূরপাল্লার বোমারু বিমান। সেখানে একটি নতুন সামরিক ঘাঁটি বানিয়ে রাখা হয়েছে ৫ হাজার মেরিন সেনার জন্য।
সম্প্রতি ফিলিপাইনের লুজন দ্বীপেও যুক্তরাষ্ট্র মোতায়েন করেছে ‘টাইফুন’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, যার লক্ষ্য চীনের সামরিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মহড়া বাড়ছে অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোতেও। জুনে একটি ব্রিটিশ নৌবহর অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পথে তাইওয়ান প্রণালী অতিক্রম করলে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় বেইজিং।
চীন বলছে, এই সব কর্মকাণ্ড প্রশান্ত মহাসাগরে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি চীনের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আর তাই বেইজিং বলছে, তারা প্রতিরক্ষার জন্য নয়, বরং এইসব পশ্চিমা উসকানি ঠেকাতেই প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।
আপনার মতামত লিখুন :