চলতি সপ্তাহেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-শাবাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সোমালিয়াকে দেওয়া প্রতিরক্ষা সহায়তা বাড়িয়েছে তুরস্ক। গত শনিবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ও তার সোমালি প্রতিপক্ষের মধ্যে ফোনালাপের পর সামরিক সহায়তা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে দ্য মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, আঙ্কারা এ সপ্তাহে সোমালি সরকারকে তিনটি ‘টি-১২৯ আতাক’ হেলিকপ্টার সরবরাহ করেছে।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় তুরস্ক সোমালির নৌবাহিনীকে দুটি ইউটিলিটি হেলিকপ্টার দিয়েছে। একই সঙ্গে আঙ্কারাকে সোমালির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ নৌবাহিনী গঠনের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।
তুরস্ক গত এক বছর ধরে সোমালি পাইলটদের আতাক হেলিকপ্টার চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল। সম্প্রতি সেই প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ায় হেলিকপ্টারগুলো পাঠানো হয়।
ওপেন-সোর্স তথ্যে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে তুরস্ক ও কাতারের ছয়টি তুর্কি এ-৪০০এম ও কাতারি সি-১৭এ কার্গো বিমান মোগাদিশুতে পৌঁছেছে, সম্ভবত হেলিকপ্টার বহনের জন্য।
মিডল ইস্ট আই মন্তব্যের জন্য তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে তাৎক্ষণিক কোনো পাওয়া যায়নি।
একটি সূত্র বলেছে, ‘আতাক হেলিকপ্টার সরবরাহের মাধ্যমে আঙ্কারা কেবল অস্ত্র স্থানান্তরই করবে না, বরং সোমালির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধক্ষমতা তৈরি করবে।
শনিবার ফোনালাপে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহাম্মদকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সোমালির উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের পথে আগ্রহী এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় দেশটিকে আরও জোরালোভাবে সহায়তা করবে তুরস্ক।
২০২৬ সালে সরাসরি ভোটে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনের আগে দেশটিকে স্থিতিশীল করাই আঙ্কারার মূল লক্ষ্য।
আল-শাবাবের হুমকি ও তুরস্কের জবাব
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আল-শাবাব আবার সক্রিয় হয়েছে, বিশেষ করে গত মাসে রাজধানী মোগাদিশুর দক্ষিণে কিছু এলাকা দখল করে। তবে অতীতেও এই গোষ্ঠীটি এভাবে অগ্রসর হয়েছিল, পরে সোমালি বাহিনীর সামরিক চাপে পিছু হটতে বাধ্য হয়।
এই প্রেক্ষাপটে তুরস্ক সোমালিতে তার সামরিক উপস্থিতি দ্বিগুণ করে ৫০০-এর বেশি সৈন্য নিয়োগ করেছে। এই বাহিনী তুর্কি ঘাঁটি রক্ষা, বন্দরের নিরাপত্তা ও সশস্ত্র ড্রোন পরিচালনার কাজ করছে।
যদিও তুরস্কের টিবি২ বায়রাক্টার ড্রোন এরই মধ্যেই চালু ছিল। সম্প্রতি আঙ্কারা সোমালিয়ায় দুটি শক্তিশালী আকিনসি ড্রোন পাঠিয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ উচ্চতায় উড়তে সক্ষম এই ড্রোনগুলো ২৪ ঘণ্টা উড়তে পারে ও রাতেও অভিযান চালাতে সক্ষম হওয়ায় আল-শাবাবের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আমেরিকা পিছু হটছে, তুরস্ক এগোচ্ছে
যখন যুক্তরাষ্ট্র সোমালিতে সহায়তা কমিয়ে দিচ্ছে, তখন তুরস্ক সামরিক সহযোগিতা বাড়াচ্ছে, এটি দেশটিতে এক ধরনের শক্তির শূন্যতা পূরণের কৌশল। মার্কিন বিমান হামলা বাড়লেও গত মার্চ মাসে দেশটির অভিজাত দানাব ইউনিটের তহবিলও কমিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাহিনীটি আল-শাবাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বাণিজ্য ও জ্বালানি অংশীদারত্ব
২০১১ সালে এরদোয়ানের প্রথম সোমালি সফরের পর থেকেই আঙ্কারা মোগাদিশুতে দৃঢ়ভাবে সক্রিয়। তারপর থেকে সম্পর্ক বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা অংশীদারত্বে গভীর হয়েছে।
গত বছর তুরস্ক সোমালির সঙ্গে জ্বালানি অনুসন্ধান ও খনন চুক্তি করেছে, যার আওতায় উপকূলের কাছে অনুসন্ধান জাহাজও পাঠিয়েছে।
এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও সম্প্রতি এরদোয়ান বলেছেন, ‘জ্বালানি বিষয়ে সুখবর আসছে’, যা দেশটির জ্বালানি সম্ভাবনার ইঙ্গিত হতে পারে। ফলে আঙ্কারায় জল্পনা শুরু হয়েছে, ঘোষণাটি সোমালিয়ার জ্বালানি সম্পদের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :