ঢাকা বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

বিশ্বের বৃহত্তম হাতে লেখা কুরআন তৈরি করলেন ইরাকি শিল্পী

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ০৭:৫১ পিএম
বিশাল কুরআন সম্পূর্ণ হাতে লিখতে ছয় বছর সময় লেগেছে। ছবি- সংগৃহীত

ইরাকের সাবেক স্বর্ণকার আলী জামান ছয় বছর পরিশ্রম করে হাতে লিখেছেন বিশ্বের বৃহত্তম কুরআন শরিফ। চার মিটার লম্বা ও দেড় মিটার চওড়া প্রতিটি পৃষ্ঠার এই অনন্য পাণ্ডুলিপি তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে।

১৯৭১ সালে ইরাকের সুলায়মানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন আলী জামান। ছোটবেলা থেকেই ইসলামি ক্যালিগ্রাফির প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল তার। পেশাগতভাবে স্বর্ণকার হলেও ২০১৩ সালে ব্যবসা ছেড়ে তিনি সম্পূর্ণভাবে নিজেকে উৎসর্গ করেন ক্যালিগ্রাফির শিল্পে।

২০১৭ সালে তিনি তার পরিবারসহ ইস্তাম্বুলের ফাতিহ জেলায় চলে আসেন। সেখানে ইসলামি শিল্পের ঐতিহ্য এখনো জীবন্ত। এখানেই শুরু হয় তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রকল্প—বিশ্বের বৃহত্তম হাতে লেখা কুরআন।

পুরো কুরআনটি লেখা হয়েছে থুলুথ লিপিতে। থুলুথ হলো আরবি ক্যালিগ্রাফির একটি অত্যন্ত অলঙ্কৃত ও জটিল ধরন। তিনি ব্যবহার করেছেন ঐতিহ্যবাহী খাগড়া কলম ও প্রাকৃতিক কালি। কোনো আধুনিক সরঞ্জাম বা প্রযুক্তির সাহায্য নেননি তিনি। প্রতিটি অক্ষর নিজের হাতে নিখুঁত মনোযোগে লিখেছেন।

প্রতিটি পৃষ্ঠা খোলার সময় এর বিস্তার তিন মিটার পর্যন্ত হয়। জামান প্রতিদিন কাজ করতেন ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক মিহরিমাহ সুলতান মসজিদ কমপ্লেক্সের এক ছোট ঘরে। সারা দিন ক্যালিগ্রাফিতে নিমগ্ন থাকতেন তিনি। শুধু নামাজ ও খাবারের জন্য সামান্য বিরতি নিতেন।

পুরো প্রকল্পটি ছিল কোনো পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে। গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি কাজ চালিয়ে গেছেন; যদিও ২০২৩ সালে স্বাস্থ্যগত কারণে কাজটি কিছুদিনের জন্য স্থগিত রাখতে হয়।

ক্যালিগ্রাফির জগতে আলী জামান কোনো অচেনা নাম নন। তিনি সিরিয়া, মালয়েশিয়া, ইরাক ও তুর্কিয়ার নানা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় থুলুথ এবং নাসখ লিপিতে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন। তার রয়েছে একাধিক বিশিষ্ট ক্যালিগ্রাফারদের প্রদত্ত আনুষ্ঠানিক অনুমোদন বা ইজাজা।

২০১৭ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান তাকে প্রদান করেন ‘ডিস্টিংকশন’ পুরস্কার। এটি তুরস্কের আন্তর্জাতিক হিলিয়ে-ই শেরিফ প্রতিযোগিতায় তার অসাধারণ সাফল্যের স্বীকৃতি।

আনাদোলু-কে আলী জামান বলেন, ‘এমন কিছু তৈরি করতে পেরে আমি গর্বিত, যা খুব কম মানুষই করতে পারে, এমনকি চেষ্টা করতেও সাহস পায় না। প্রতিটি অক্ষর আমার আত্মা ও পরিশ্রমের প্রতিফলন।’

তার ছেলে রেকার জামান জানান, ইসলামি শিল্প ও ক্যালিগ্রাফি সত্যিকারের মর্যাদা পায় বিধায় তাদের পরিবার ইরাক ছেড়ে তুরস্কে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির সময় উপকরণ জোগাড় করা ছিল কঠিন, কিন্তু আমরা থামিনি।’

জামানের তৈরি এই পাণ্ডুলিপি পূর্ববর্তী বিশ্বের বৃহত্তম হাতে লেখা কুরআনকে ছাড়িয়ে গেছে, যার পরিমাপ ছিল ২.২৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১.৫৫ মিটার প্রস্থ। পরিবারটি এখন এই বিশাল কুরআন সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা করছে। তাদের প্রত্যাশা, এটি তুরস্কেই থাকবে।