ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন, ২০২৫

ঈদুল আজহা ঘিরে ভারতে পশুর হাট বন্ধের নির্দেশ, সমালোচনার ঝড়

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
গোশালা দুজন ব্যক্তি। ছবি- সংগৃহীত

মুসলমানদের পবিত্র ঈদুল আজহা ঘিরে টানা পাঁচদিন ভারতের মহারাষ্ট্রে সমস্ত পশুর হাট বন্ধ রাখতে কড়া নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আজ ৩ জুন থেকে আগামী ৮ জুন পর্যন্ত পশুর হাট বন্ধ থাকবে।

তবে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ঈদের আগের সপ্তাহে ভেড়া ও ছাগলসহ সব ধরনের পশুর বিক্রি বন্ধের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ঈদুল আজহার অন্যতম প্রধান ধর্মীয় অনুষঙ্গ হলো কোরবানি করা, যা আত্মত্যাগ ও আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে পালন করা হয়।

সোমবার (২ জুন) এ তথ্য জানিয়েছে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

গত ২৭ মে মহারাষ্ট্র সরকারের দেশীয় গরুর কল্যাণ কমিশন মহারাষ্ট্র গোসেবা আয়োগ রাজ্যের সমস্ত কৃষি উৎপাদন বাজার কমিটিকে (এপিএমসি) চিঠি পাঠিয়েছে।

রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১৪ মে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, রাজ্যে ২০২৫ সালের কোরবানি ঈদ উদযাপনের সময়, মহারাষ্ট্র পশু সুরক্ষা আইন ১৯৭৬ ও মহারাষ্ট্র পশু সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন ১৯৯৫ (সংশোধন ৪ মার্চ ২০১৫) বাস্তবায়ন করা উচিত। এই আইনে গরু ছাড়াও বলদ ও ষাঁড় (গো-জাতীয়) জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এই প্রাণীগুলোর বয়স বা স্বাস্থ্য নির্বিশেষে পরিবহন, বিক্রয় এবং দখল সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘৩ জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে কোনো পশুর হাট (গোরা বাজার) বসানো যাবে না, যাতে গরু জবাইয়ের কোনো অবৈধ ঘটনা না ঘটে। এই বিষয়ে সতর্ক থাকুন।’

মহারাষ্ট্র পশু সংরক্ষণ আইনের আওতায় গরু, বলদ ও ষাঁড়ের জবাই এবং এমনকি মাংস রাখাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

তবে এই সিদ্ধান্তকে ‘ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রতি অন্যায়’ আখ্যা দিয়ে বঞ্চিত বহুজন অঘাড়ি (ভিবিএ) প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলেছে, ‘গরুর অবৈধ বিক্রির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ দরকার, কিন্তু পুরো বাজার বন্ধ করা ভুল সিদ্ধান্ত। এই চিঠি কৃষক, শ্রমিক, মধ্যস্বত্বভোগী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থের পরিপন্থী। এতে কেবল গরু নয়, কোনো আইনগত নিষেধ না থাকা সত্ত্বেও ছাগল, মহিষ ও অন্যান্য পশুর ক্রয়-বিক্রিও বন্ধ হয়ে যাবে, যা প্রত্যক্ষভাবে কৃষক, পরিবহনকর্মী এবং কসাই সম্প্রদায়ের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’

দলটি রাজ্য সরকারকে ওই নির্দেশনা ‘পুনর্বিবেচনার দাবি’ ও এর বাস্তবায়ন না করার আহ্বান জানিয়েছে।

ভিবিএর রাজ্য মুখপাত্র তৈয়্যব জাফর বলেছেন, ‘এই চিঠিটি শুধু কৃষক-বিরোধী নয়, সংবিধান ও আইনের সীমা লঙ্ঘনও করেছে। গোসেবা আয়োগ একটি পরামর্শদাতা সংস্থা মাত্র। তাদের প্রশাসনিক আদেশ জারির কোনো অধিকার নেই। এভাবে সরাসরি কৃষি উৎপাদন বাজার কমিটিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া সংবিধানবিরোধী ও ক্ষমতার অপব্যবহার।’

তিনি আরও বলেন, “মহারাষ্ট্র পশু সংরক্ষণ আইন, ১৯৭৬ অনুযায়ী গরুর কেনাবেচা ও পরিবহন নিষিদ্ধ হলেও দেখা যায় শুধু ক্রেতা ও পরিবহনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে নয়। এটি আইনের চোখে সমতার নীতির লঙ্ঘন। যদি আইন বাস্তবভাবে প্রযোজ্য হয়, তবে বিক্রেতাদেরও সমানভাবে অভিযুক্ত করা উচিত। জেলার মধ্যে পশু পরিবহনকে আইনের আওতায় না পড়া সত্ত্বেও শাস্তির মুখে পড়তে হয়, যা সম্পূর্ণ ভুল প্রয়োগ। এই অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।’

এদিকে গোসেবা আয়োগের চেয়ারম্যান শেখর মুন্ডাডা জানিয়েছেন, তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল কোরবানির আগের দিনে গরু জবাই বন্ধ করা।

তিনি বলেন, “ঈদের আগে অনেক পশু কেনাবেচা হয় কোরবানির উদ্দেশ্যে। আমরা শুধু চাইছি এর মাধ্যমে গরু জবাই যেন না ঘটে। ছাগল বা অন্য পশুর বিক্রি বন্ধ হবে শুধু এক সপ্তাহের জন্য এবং এই নির্দেশনাটি একটি ‘পরামর্শ মাত্র’ হিসেবে দেখতে হবে।”

বর্তমানে রাজ্যটিতে মহারাষ্ট্র স্টেট এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং বোর্ড নিয়ন্ত্রিত ৩০৫টি প্রধান ও ৬০৩টি সহযোগী কৃষি উৎপাদন বাজার কমিটি (এপিএমসি) রয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যে ২৯২টি পশু হাট চালু রয়েছে, যেগুলোর প্রায় সবই এপিএমসির অধীন।