উত্তরপ্রদেশে কানওয়ার যাত্রাপথে দোকানদারদের ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করতে গিয়ে পুলিশি হয়রানি চলছে বলে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি।
তার অভিযোগ, যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ অমান্য করে দোকানিদের ধর্ম পরীক্ষা করতে গিয়ে চরম পর্যায়ের অবমাননাকর আচরণ করছে। এমনকি পুলিশ দোকানিদের প্যান্ট খুলে ধর্ম পরীক্ষা করছে।
বুধবার (২ জুলাই) এই অভিযোগে যোগী সরকারকে তুলোধোনা করেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও ঘটনাটির নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের জবাবদিহির দাবি তুলেছে।
বিতর্কের সূত্রপাত গত বছর। কানওয়ার যাত্রাপথে যত দোকান রয়েছে তার বাইরে দোকানদারদের নাম-পরিচয় লিখে রাখতে হবে বলে নির্দেশিকা জারি করেছিল যোগী সরকার। সে নিয়ে তুমুল হইচই হয়। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টেও। এর পরেই সেই নির্দেশিকায় স্থগিতাদেশ জারি করে দেশের শীর্ষ আদালত।
আদালতের মতে, ধর্মীয় বা সামাজিক পরিচয়ের ভিত্তিতে এ ধরনের বিধিনিষেধ সংবিধানবিরোধী। কিন্তু যোগী প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানছে না বলে অভিযোগ ওয়েইসির। বরং পুলিশের মাধ্যমে দোকানদারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে, অপমানজনকভাবে ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করছে।
ওয়েইসি বলেন, ‘মুজাফফরনগর বাইপাসের ধারে বহু হোটেল আছে। আজ থেকে নয়, বহু বছর ধরেই আছে। কানওয়ার যাত্রাও নতুন শুরু হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তাহলে এখন কেন এসব হচ্ছে? কেন হোটেল মালিকদের আধার কার্ড চাওয়া হচ্ছে? কেন প্যান্ট খুলতে বলা হচ্ছে দোকানিদের?’
পুলিশের বিরুদ্ধেও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘পুলিশের উচিত নিজের কাজ করা, যারা দোকানিদের হয়রানি করছে তাদের গ্রেপ্তার করা। এরা নাটক করছে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মানছে না।’
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘কারও দোকানে ঢুকে তার ধর্ম জানতে চাওয়া কি ঠিক? সরকার কিছু করছে না কেন? যে রাজ্যে আইনকানুনের শাসন থাকার কথা সেখানে প্রশাসনই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের তোয়াক্কা করছে না। এটা শুধু মুসলিমদের নয়, দেশের সংবিধানেরও অপমান।’
এই ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
আগামী ১১ জুলাই থেকে শুরু হবে কানওয়ার যাত্রা। চলবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। গঙ্গা থেকে জল নিয়ে শিবমন্দিরে যাবেন ভক্তরা। এই পথে খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রামের জন্য থামেন অনেকেই। বিভিন্ন ধর্মের মানুষের দোকান রয়েছে এখানে।
কানওয়ার যাত্রাকে কেন্দ্র করে উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড সরকারের নির্দেশিকা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল গত বছরই। দুই রাজ্যের সরকারের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যাত্রাপথে রাস্তার দুই ধারে যেসব খাবারের দোকান রয়েছে, সেসব দোকানের বাইরে টাঙানো সাইনবোর্ডে দোকান মালিকের নাম-পরিচয় স্পষ্ট করে লিখতে হবে। এই নির্দেশিকাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
নির্দেশিকার বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও একটি মামলা করেন। গত বছর ২২ জুলাইয়ে এই বিষয়ে নির্দেশিকায় সুপ্রিম কোর্ট জানায়, কেউ যদি সদিচ্ছায় দোকানের বাইরে নাম-পরিচয় লিখতে চান, তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু কাউকে জোর করে সরকারের নির্দেশ মানতে বাধ্য করা যাবে না।
তথ্যসূত্র: এএনআই, দ্য ইকোনমিক টাইমস, প্রতিদিনের সংবাদ
আপনার মতামত লিখুন :