সিরিয়ার ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে সৌদি আরবে রাজধানী রিয়াদে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা।
২৫ বছরের মধ্যে প্রথম দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বৈঠকেও অংশ নেন। বুধবার (১৪ মে) সকালের এ বৈঠকের সময়কাল ছিল ৩৩ মিনিট।
বৈঠকে প্রেসিডেন্ট আল-শারাকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর মতো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের আহ্বান জানান ট্রাম্প। তিনি সিরিয়ায় আইএসআইএস রোধ ও ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে (হামাস) বহিষ্কার করার আহ্বান জানান।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের আহ্বানে সায় দিয়েছেন আল-শারা, যিনি এক সময় আল-কায়েদার একটি গ্রুপের কমান্ডার ছিলেন।
এদিন কাতার যাওয়ার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বৈঠকটিকে ‘দুর্দান্ত’ বলে বর্ণনা করেন। সিরিয়ার এই নেতাকে ‘তরুণ, হ্যান্ডসাম, কঠোর ও খুব শক্তিশালী অতীতের যোদ্ধা’ বলেও অভিহিত করেন তিনি।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আল-শারার এসব গুণাবলি একত্রে ধরে রাখার অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে। আমার মনে হয় তার সম্ভাবনা আছে, তিনি একজন সত্যিকারের নেতা। তিনি কিছু একটা করে দেখিয়েছেন এবং এটি বেশ আশ্চর্যজনক।’
ঐতিহাসিক এই বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরেকটি নাটকীয় বিবৃতি দেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আল-শারা তার দেশ স্থিতিশীল হয়ে উঠলে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে চায়।’
তার এ মন্তব্যের পর বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) সিরিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু সর্বশেষ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতিক্রিয়ায় একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সিরিয়া সম্পর্কে ট্রাম্পের ঘোষণায় আমরা হতবাক নই, আমরা জানতাম যে এটি ঘটবে। সম্প্রতি সিরিয়ানরা তাদের কঠোর অবস্থান নমনীয় করেছে এবং করছে। এটি সম্পূর্ণরূপে মার্কিন সিদ্ধান্ত। ট্রাম্প যা ভালো তাই করেন।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ট্রাম্প আব্রাহাম চুক্তি সম্প্রসারণ করতে চান এবং বিশ্বাস করেন যে, সিরিয়াকে আরও ঘনিষ্ট করার এটি একটি উপায়। আমরা এখনো মনে করি, তারা স্যুট পরা জিহাদি। কিন্তু তারা একটি আক্রমণাত্মক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আল-জোলানি শিখেছেন কীভাবে তার স্যুটের সঙ্গে টাই মেলাতে হয়।’
ট্রাম্পের আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ওয়াশিংটন ও জেরুজালেমে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। আল-কায়েদার একসময়ের জ্যেষ্ঠ সদস্য আল-শারা পূর্বে সিরিয়ায় ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (পূর্বে জাবহাত আল-নুসরা) নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ইরাকে আল-কায়েদায় থাকাকালীন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে এখনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। সম্প্রতি তার তথ্য দেওয়ার জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘আল-শারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রতারণা করছে। একজন স্যুটপরা কূটনীতিকের ছদ্মবেশে সিরিয়ায় একটি ইসলামপন্থি শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।’
আপনার মতামত লিখুন :