অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের টানা ১৯ মাসের সামরিক অভিযানে মৃত্যু নিশ্চিতভাবে ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে, এমনই ভয়াবহ পরিসংখ্যান উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণে। আর ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে ঘিরে সম্প্রতি কিছু পশ্চিমা নেতা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া শুরু করেছেন।
তবে এসব অবস্থানকে ‘অত্যন্ত দেরিতে নেওয়া তথাকথিত নিন্দা’ বলে সমালোচনা করেছেন মার্কিন সাংবাদিক ও বিশ্লেষক নাতাশা লেনার্ড। কাতারভিত্তিক সংবাদামাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের ডান পাশে দাঁড়ানোর একটি উদারপন্থী ঐতিহ্য আছে, যা সাধারণত তখনই সামনে আসে, যখন প্রাসঙ্গিক মুহূর্তটি অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে।’
‘কথা বললেও কিছুই বন্ধ করতে চান না’
লেনার্ড বলেন, এখন যারা কথা বলছেন তারা অধিকাংশই এমন নেতা, যারা ইসরায়েলের কার্যক্রম নিয়ে কিছুটা নিন্দা করতে প্রস্তুত, কিন্তু যুদ্ধ বা আগ্রাসন বন্ধ করতে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে নারাজ।
তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মার্ক কার্নির মতো নেতাদের উদাহরণ টেনে বলেন, “তারা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য একটি খ্যাতি গড়তে চান, যাতে তারা একদিন বলতে পারে ‘আমরা তো তখন কথা বলেছিলাম’।”
‘বাস্তবে তারা অর্থায়ন ও আদর্শিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে’
লেনার্ডের দাবি, এই নেতারা শুধু মুখে নিন্দা করেই থেমে থাকছেন না— বরং ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে অর্থনৈতিক ও আদর্শিকভাবে সমর্থনও দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘যারা এই ১৯ মাসের সংঘাতকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করেছেন, তারা জানেন এই সরকারগুলোর নীতিগত অবস্থান আসলে ইসরায়েলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’
‘চূড়ান্ত সমাধান’ শব্দটি ব্যবহার করছেন বিশেষজ্ঞরাও
লেনার্ড আরও বলেন, এখন এমনকি গণহত্যা অধ্যয়ন ও মানবতাবাদী বিশেষজ্ঞরাও গাজায় চলমান পরিস্থিতিকে ‘চূড়ান্ত সমাধানের’মতো পরিভাষায় ব্যাখ্যা করছেন— যা ইঙ্গিত করে পরিস্থিতির ভয়াবহতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, ‘এটি এমন কিছু নয় যা হঠাৎ বা বিচ্যুতি হিসেবে ঘটছে। বরং গাজায় যুদ্ধের এই অনেক মাস পরও এটি একটি ধারাবাহিক ও তীব্রতর হয়ে ওঠা গণহত্যারই অংশ।’
লেনার্ড দৃঢ়ভাবে বলেন, এখন আর কেউই বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগে নেই। বিশ্বের বহু মানুষ জানে, যে ‘নীতিগত দুঃখ প্রকাশ’ করা হচ্ছে, তার সঙ্গে বাস্তব পদক্ষেপের কোনও মিল নেই।
এই বক্তব্য এমন সময় সামনে এলো যখন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজায় জরুরি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে, কিন্তু কার্যকর কূটনৈতিক চাপ বা নিষেধাজ্ঞা এখনো গৃহীত হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, দেরিতে উচ্চারিত এই নিন্দা এবং প্রতীকী উদ্বেগের রাজনীতি বিশ্বজুড়ে ‘নৈতিক দায় এড়ানোর কৌশল’ হিসেবেই বেশি প্রতীয়মান হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :